জাতীয়

বার্ন ইউনিটে স্বজনদের আহাজারি

পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসাদের স্বজনেরা ভিড় করছেন বার্ন ইউনিটের সামনে। প্রিয়জনের দগ্ধ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তারা। এতে বার্ন ইউনিটের সামনে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ ৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন।

এরমধ্যে ৮ জন বার্ন ইউনিটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে এবং গুরুতর অগ্নিদগ্ধ একজন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন।

পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি আছেন জাকির (৩৮ শতাংশ দগ্ধ), রেজাউল (৫৭ শতাংশ), সালাউদ্দিন (১০ শতাংশ), হেলাল (১৬ শতাংশ), সেলিম (১৪ শতাংশ), মুজাফফর (৩০ শতাংশ), মাহমুদ (১৩ শতাংশ), আনোয়ার (২৮ শতাংশ)।

Advertisement

শরীরের ৬০ শতাংশ পোড়া নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন সোহাগ।

ছেলে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা শুনে বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ছুটে আসেন সোহাগের বাবা আবু তালেব।

বার্ন ইউনিটের আইসিইউ’র সামনে বিমর্ষভাবে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। তার পাশেই বসে ছিলেন আরেক ছেলে সোহাগের বড় ভাই আলামিন।

ছেলে অগ্নিদগ্ধ হাওয়ায় অনেকটাই বাকরুদ্ধ আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, ‘সোহাগ চকবাজারের একটি দোকানে কাজ করতো। আমি মাটি কাটার কাজ করি। আমার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে এবং ছোট ছেলে পড়ালেখা করে। আর মেয়ে একেবারেই ছোট। সবাইকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করি।’

Advertisement

এ সময় পাশে বসে থাকা সোহাগের বড় ভাই আলামিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি রাত ১০টার ১৭ মিনিটের দিকে সোহাগকে ফোন করি। ও বলে একটু কাজ আছে, আধাঘণ্টার মধ্যেই রওনা দেব। ভাই সেই আধাঘণ্টা আর পেল না। ভাই আমার আর সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরল না। আগুনে পুড়ে ভাই এখন মেডিকেলে ভর্তি।’

স্বামী রিকশাচালক আনোয়ার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা শুনে বৃহস্পতিবার সকালে বার্ন ইউনিটে ছুটে এসেছেন স্ত্রী হাজেরা বেগম। বার্ন ইউনিটের সামনে তার হৃদয়বিদারক আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। তার আত্মচিৎকারে ঘটনাস্থলে থাকা অনেকের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে।

এক পর্যায়ে হাজেরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। আমরা কামরাঙ্গীরচরে থাকি। রিকশা করে ও বাসায় ফিরছিল। এ সময় চকবাজার আগুনে দগ্ধ হয়েছে। আমার সুস্থ স্বামী ঘর থেকে বের হয়ে আর সুস্থভাবে ঘরে ফিরতে পারলেন না।’

চকবাজারের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন সালমা বেগমের দুই মেয়ে জামাই। মেয়ে জামাইদের অগ্নিদগ্ধদের ঘটনা শুনে তিনি ছুটে আসেন বার্ন ইউনিটে ।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার দুই জামাই সদরঘাটে কাপড়ের দোকানে কাজ করতো। রাতে কাজ শেষ করে দু’জনে একসঙ্গে রিকশায় করে কামরাঙ্গীরচরের বাসায় ফিরছিল। পথিমধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ছোট জামাইকে চিকিৎসা দিয়ে এখান থেকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বড় জামাই আলাউদ্দিন এখনও ভর্তি।’

বুধবার রাত পৌনে ১১টায় চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবনে আগুন লাগে। পরে তা পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রাত ৩টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০০ কর্মী। তবে ছোট গলি ও পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ঘটনাস্থলে সার্চ অভিযান চলছে।’

এমএএস/আরএমএম/এনডিএস/জেআইএম