জাতীয়

‘ভাই খুঁজছেন বোনকে, বোন স্বামীকে’

চকবাজারের বাসিন্দা মো. মাহির হোসেন। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। ভাইকে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন বোন নূর আনহা। বোনেরা খুঁজে পাচ্ছে না স্বামী সন্তানকে। নিখোঁজ রয়েছেন জহিরেরা। মৃতদের খোঁজে ঢামেকে আসছেন অনেকে। ভিড় জমতে শুরু করেছে হাসপাতাল। ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন সবাই। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে স্বজনেরা।

Advertisement

ভাই আব্দুর রহিমকে খুঁজে পাচ্ছেন না ইসমাইল হোসেন। ঢাকা মেডিকেলে ছেলের খোঁজে এসেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি পুড়ে যাওয়া স্টেশনারি দোকান ওয়াসিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক। 

চারদিকে অন্ধকার দেখছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। কি হতে কি হয়ে গেল বুঝে আসছে না কিছুই। এক নিমিষেই যেন সব শেষ হয়ে গেল সবার। এভাবেই কেঁদে কেঁদে বলছিলেন নিহতের স্বজনেরা।

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনগুলোতে ভয়াবহ আগুন লাগায় ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে। কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে ঢামেক। নিখোঁজদের সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন শত শত স্বজনেরা।

Advertisement

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর) মো. তারেক হাসান ভুঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে ৬৫ জনের লাশ এসেছে। এর মধ্যে ৫৭ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৩টি শিশুর লাশ। লাশগুলো শনাক্তের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে রাখা হচ্ছে। স্বজনেরা এসে শনাক্ত করতে পারলে তাদের নম্বরগুলো জানানো হচ্ছে।

লালবাগের সাবেক এমপি হারুন-অর-রশিদের চাচা হাজী আব্দুল ওয়াহেদের প্লাস্টিক ও পারফিউমের গুদামে বুধবার রাত ১০টায় আগুন লাগে। রাত ১টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে আগুন ভয়াবহ আকারে আশপাশের ৫টি বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি ইউনিট রাত ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জানান, এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ তারা শনাক্ত করেছেন। সেগুলো তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। আহত ও দগ্ধ ৪১ জন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান। পরে তা পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রাত ৩টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০০ কর্মী। তবে ছোট গলি ও পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়।

Advertisement

এমআরএম/জেআইএম