বিভিন্ন অপরাধের দায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ১৩ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সাবেক দুই শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত এবং এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী তার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের ১ মার্চ নগরীর সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীভু দাশগুপ্তের হয়ে পরীক্ষা দেয়ার দায়ে চবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ ফাহিম জাফরিকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. মাঈন নেওয়াজের ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হলের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে ল্যাপটপ, মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাইয়ের ঘটনায় রসায়ন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের মিজানুর রহমান ফকিরকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উস্কানি ও প্ররোচণার দায়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইমরান নাজির ইমন ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জিয়াউল হক মজুমদারকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এমদাদুল হক এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ফাহিম হাসানকে মারধরের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দ্বীপায়ন দেব ও সাব্বিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের অর্ণব বড়ুয়া ও আরবী বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জুবায়ের আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুল্যান্সের অপব্যবহার ও মেডিকেলের কর্মচারীদের হুমকির দায়ে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এইচ এম হাসানুজ্জামানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল, নগদ অর্থ ছিনতাই ও তাদের মারধরের ঘটনায় ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেনকে এক বছর এবং অর্থনীতি বিভাগের মামুনুর রশিদকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাব্বিরকে গত বছর সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দুই মাস বহিষ্কার করা হয়েছিল।
গত বছরের ১৪ এপ্রিল জঙ্গিবাদে সম্পৃক্তার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. আজফার হোসেনসহ ছয়জনকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর আজফারকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠির কোনো জবাব না দেয়ায় তার ওই বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।
এছাড়া গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. জামশেদুল কবির ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেনের সনদ স্থগিত ও আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মোশাররফ হোসেন শিকদারকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বহিষ্কৃতদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিষিদ্ধ ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বহিষ্কারাদেশ, সনদ স্থগিত ও ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ আজ থেকে কার্যকর হবে
আবদুল্লাহ রাকীব/এমএএস/এমএস