জাতীয়

আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা

আত্মশুদ্ধি, নিজ নিজ গুনাহ মাফ, সকল বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত ও রহমত প্রার্থনা এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখো মুসুল্লির আকুতিতে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সাদ অনুসারী বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা শামীম। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। চলে দীর্ঘ ২৫ মিনিট।

Advertisement

আখেরি মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনা করা হয়। এ সময় দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ জানায় লাখ লাখ মুসল্লি। আল্লাহর দরবারে আকুতি-মিনতি করে চোঁখের পানিতে বুক ভাসান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ‘আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মধ্যাহ্নের আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

মোনাজাতে অংশ নিতে মঙ্গলবার ভোর হতেই চারদিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ইজতেমা ময়দানস্থলে পৌঁছান। আখেরি মোনাজাতের আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে মুসল্লিরা ময়দানের আশপাশের অলি-গলি, রাস্তা, পাশ্ববর্তী বাসাবাড়ি, কল-কারখানার ছাদে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-ঘোড়াশাল ও কামারপাড়া সড়কে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। এ ছাড়াও তুরাগ নদে নৌকায় বসে দলে দলে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন মুসল্লিরা। বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পেশার মানুষ ভিড় ঠেলে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

শেষ দিনে বয়ানকারী

Advertisement

মঙ্গলবার বাদ ফজর উর্দুতে বয়ান করেন দিল্লির হাফেজ ইকবাল নায়ার। পরে বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি ওসামা বিন ওয়াসিফ। সকাল ১০টার দিকে উর্দু ভাষায় হেদায়েতি বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা শামীম এবং বাংলায় তা তরজমা করেন মাওলানা আশরাফ আলী। পরে দিল্লির মাওলানা শামীম হেদায়েতির কিছু কথা বলে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ভারতের নিজামউদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর পক্ষে নেতৃত্ব দিতে ৩২ সদস্যের একটি দল টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেন। এতে জিম্মাদারের নেতৃত্বে দেন দিল্লির মাওলানা শামীম।

আখেরি মোনাজাতে নারীদের অংশগ্রহণ

তুরাগতীরে অনুষ্ঠিত ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে শতশত নারী মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শতশত নারী মুসল্লি ইজতেমা ময়দানের আশপাশে, কল-কারখানা ও বাসাবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

বিদেশি মেহমান

Advertisement

সাদপন্থী মাওলানা মো. আশরাফ আলী জানান, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও চীনসহ প্রায় ৩৬টি ভিনদেশের তাবলিগ জামাতের সহস্রাধিক বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বাদ ফজর আমবয়ানে শুরু হয় একটানা পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতসহ গত দুইদিন জোবায়ের অনুসারীরা বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনা করেন। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতসহ ইজতেমা পরিচালনা করেন সাদ অনুসারীরা।

আখেরি মোনাজাতের পর মাইকে জোবায়ের অনুসারীরা ২০২০ সালের ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী তাদের আগামী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হবে ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি। তবে সা’দ অনুসারীরা তাদের আগামী বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেননি।

কেন্দ্রীয় সূরা সদস্যদের সঙ্গে মায়োয়ারা করে মাওলানা সা’দ ওই তারিখ নির্ধারণ করবেন বলে এ পক্ষের মুরুব্বি মো. আশরাফ আলী জানান।

মো. আামিনুল ইসলাম/এসআর/আরআইপি