মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করে হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। প্রতিবেদনে তিন প্রতিষ্ঠানসহ নদী দখলে ৩৭ ব্যক্তির নাম ওঠে এসেছে।
Advertisement
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ তালিকা পেশ করা হয়। পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) দিন ধার্য করেন।
প্রতিবেদন দাখিল করার বিষয়টি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজেকে নিশ্চিত করেছেন।
অবৈধ দখলদার তিন প্রতিষ্ঠান হলো- মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশনস লিমিটেড, জাগরণী চক্র ও পেন্টা প্রোপার্টিজ লিমিটেড। এছাড়া বাকি আরও ৩৪ জন নদীর জায়গা দখল করে রেখেছেন।
Advertisement
স্থানীয় ভূমি অফিসের তৈরি করা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পেশ করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশিরভাগ জমি দখলকারী ধলেশ্বরী নদীর পূর্ববর্তী এলাকায় জমি দখল করেছে এবং কয়েকজন বালি ভরাট করেছে এবং এর মধ্যে দুটি কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
জরিপ প্রতিবেদন হাইকোর্টে পেশ করে বলা হয়, দুটি বেসরকারি সংস্থা, একটি ক্লাব এবং ৪৬ জন ব্যক্তি ধলেশ্বরী নদীর মোট ২৯.৬০ একর জমি দখল করেছে। এছাড়াও দাখিল করা প্রতিবেদনে একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান ও ৩৪ ব্যক্তির নাম ওঠে এসেছে।
জমি অধিগ্রহণকারী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো হলো- কালাম মিয়া, আবেদ আলী, শামসুল হক, বাখিরন, ইব্রাহিম মিয়া, নোমাজ আলী, ইদ্রিস আলী, আখিয়া খাতুন, আনোয়ার বেগম, আলী আকবর, সাহেদ আলী, শামসুদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল আলী, জিন্নাত আলী, আব্দুল জলিল, সুন্দর আলী, দেলোয়ার হোসেন ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ (৩.৬৯ একর); মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশনস লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহজীব আলম সিদ্দিকী (১১.৩০ একর), জুলফিকার (০.৭০ একর), জাগগনি চক্রের পক্ষে পরিচালক আজাদুল কবির আরাজু (০.৩৪ একর), আবদুল বেকেক, কামার উদ্দিন, আব্দুল খালেক, রিয়াজ উদ্দিন ও আবেদ আলী (০.৭৪ একর), আবু তাহের মোল্লা (০.৬২ একর), জগ্লু, ছালিম ও নিজাম উদ্দিন (০.৬৩ একর) মনিরুল ইসলাম (১.১৩ একর)।
আবদুল মজিদ মোল্লা, আবদুল হক ও মোস্তাক আহমেদ (০.৭৫ একর), আবদুল হক, মোস্তাক আহমেদ ও শাকিল আহমেদ (১.৯৮ একর), ইদ্রিস মোল্লা (০.৭০ একর), পেন্টা প্রোপার্টি লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম আখতারুজ্জামান, মোহসীন (০.৭১ একর), আবদুল হামিদ ও সিদ্দিকুর রহমান, হাবিবুর রহমান মোল্লা ও রাকি বেলা আক্তার (২.০২ একর), মোসলেম উদ্দিন, আব্বাস আলী, সারবত আলী, তোফাজ্জল হোসেন, কালাম মিয়া, আবেদ আলী, শামসুল হক, বাখিরন, ইব্রাহিম মিয়া, নোমাজ আলী, ইদ্রিস আলী, আছিয়া খাতুন, আনোয়ারা বেগম, আলী আকবর, ফরিদ আহমেদ, মানিকগঞ্জের ডিসি অফিসার মো. রমজান আলী (১.৩২ একর)।
Advertisement
আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার পর রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে আদেশ দেয়ার আর্জি জানান। তখন মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশনস লিমিটেডের পক্ষে জবাব দাখিলের জন্য সময় চাইলে আদালত ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেন।
মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর জায়গা দখল করে ডরিন পাওয়ার (মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশনস লিমিটেড) বিদুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) কর্তৃক দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আদেশ দেন এবং রুল জারি করেন।
রুলে মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ/ভাঙতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এছাড়া মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীকে সিএস/আরএস রেকর্ড অনুযায়ী তার মূল সীমানা রক্ষার্থে বিবাদীদের জবাবও চান হাইকোর্ট।
আদালতের আদেশের পর অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে নদী রক্ষা কমিশন ও ভূমি অফিস আজ (সোমবার) এ তালিকা দাখিল করলেন।
এফএইচ/আরএস/এমএস