নারায়ণগঞ্জে যৌনকর্মী অ্যাখ্যা দিয়ে তিন নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার বিকেলে নির্যাতিতাদের মধ্যে ফাতেমা আক্তার ওরফে ফতেহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
Advertisement
বন্দর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার ওরফে ফতেহ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা মামলায় উল্লেখ করা বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল পেয়েছি। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ কলাবাগ খালপাড় এলাকায় একটি চক্র তিন নারীকে যৌনকর্মী অ্যাখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনকারীরা উল্লাস প্রকাশ করে। যা ছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতার থেকেও নিকৃষ্টতম ঘৃণিত একটি কাজ।
নির্যাতিতা তিন নারী হলেন, মফিজ উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমা বেগম ওরফে ফতেহ (৫০), বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার বাছেদ আলীর মেয়ে আসমা বেগম (৩৫) ও বুরুন্দি এলাকার বকুল মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম (৩০)।
Advertisement
এদিকে এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলে তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে। পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নারায়ণগঞ্জে আসেন এবং ভুক্তভোগীদের মধ্যে ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন।
ঘটনার বিস্তারিত শোনার পর মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগমের মামলাটি গ্রহণ করার জন্য বন্দর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলামকে অনুরোধ করেন এবং ভুক্তভোগীর আইনীসহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান।
মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবির, উপ-পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) গাজী সালাম ও সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা।
তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি কক্ষে অবস্থান নেন এবং হাসপাতাল থেকে ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার ওরফে ফতেহকে নিয়ে আসা হয়। পরে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনেন কমিশনের সদস্যরা।
Advertisement
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবির সাংবাদিকদের জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছি। যে ঘটনা ঘটেছে তা জামিন অযোগ্য অপরাধ।
জেলা বারের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান দিপু বলেন, এ মামলায় ভুক্তভোগীদের সহায়তা করবো আমি। এই মামলার দায়িত্ব আমি নিতে চাই। আইনি যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমি তাদের পাশে আছি।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, নির্যাতিতা নারীরা যৌনকর্মী যদি হয়েও থাকে তাহলে তাদেরকে এভাবে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অধিকার কারোর নেই। তারপর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এটি পরিকল্পিতভাবেই ঘটিয়েছে। তারা ওই নারীদের বাড়ি-ঘর লুটপাটও করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণও করেননি। যার কারণে সচেতন মহলের মাঝে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে।
শাহাদাত/এমএএস/এমএস