টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ অনুসারী মাওলানা আশরাফ আলী জানিয়েছেন, এবারের ইজতেমা আদর্শগত ভিন্নতার কারণে ভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে এই ইজতেমায় স্রোতা ভিন্ন, বক্তা ভিন্ন, দোয়া ভিন্ন এবং আদর্শও ভিন্ন।
Advertisement
তিনি বলেন, ফলে এটাকে সবদিক থেকে এক ইজতেমা বলার উপায় নেই। কিন্তু আবার একদিক থেকে একও বলা যায়। কারণ পৃথক হলেও দুটি ইজতেমা একই প্যান্ডেলে হচ্ছে। এবারের ইজতেমা আয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল।
মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, মাওলানা সাদের প্রতিনিধি হিসেবে ৩২ জনের একটি দল দিল্লি থেকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় এসেছেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে এসেছেন মাওলানা শামীম তিনিই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন।
সোমবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রেজা আরিফ, মাওলানা আব্দুল্লাহ শাকিল ও সাজিদুর রহমান।
Advertisement
মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, দাওয়াতে তাবলিগের মেহনত এক সুপরিচিত মেহনত। এতে সুপরিচিত হতে দীর্ঘদিনের ত্যাগ, পরিশ্রম ও কোরবানি রয়েছে। এর উৎস হচ্ছে দিল্লির নিজামুদ্দিন থেকে। মাওলানা ইলিয়াস (র.) থেকে এ কাজের শুরু। আজ মাওলানা সাদ হলেন এর জিম্মাদার। প্রায় ৬০ বছর ধরে ওনাদের মাধ্যমে ইজতেমা পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মুরুব্বিরা ইজতেমার দুটি পক্ষকে একত্রের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর যদি এটি সম্ভব না হয়, তবে যার যার অবস্থান থেকে ইজতেমা করবেন। এতে কোনো পক্ষ যেন কোনো পক্ষকে বাধা না দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আদর্শগত পার্থক্য থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত একসঙ্গে ইজতমার প্রশ্নই আসে না। আদর্শ ভিন্ন রেখে একসঙ্গে ইজতেমা করতে যাওয়া মানেই সংঘাতকে ডেকে আনা। তারা যদি ভুল বুঝতে পারেন তাদের এ ধরনের সংঘাতে যাওয়া ক্ষতি হচ্ছে, মুসলমানের ক্ষতি হচ্ছে তাহলে আগে যেমন মাওলানা সাদের নেতৃত্বে নিজাম উদ্দিনের পরিচালনায় একসঙ্গে ইজতেমা হতো এরপরও সেভাবে হবে।
আগামী বছর ইজতেমা কখন হবে তার তারিখ নির্ধারণ করবেন ইজতেমার তাদের পক্ষের আমির মাওলানা সাদ। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি মাওলনা আশরাফ আলী।
এদিকে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির ও মুরব্বিদের বয়ান শুনে বিশ্ব ইজতেমার চতুর্থ দিন পার করলেন লাখো মুসল্লি। ইজতেমার মাওলানা সাদ অনুসারীদের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমা। সেইসঙ্গে সমাপ্তি ঘটবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমার।
Advertisement
প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার বাদ ফজর বয়ান করেন দিল্লির নিজামুদ্দিনের মাওলানা মুরছলিন। বাদ জোহর দিল্লির মাওলানা শেহজাদ, বাদ আসর মাওলানা শওকত বয়ান করেন। আখেরি মোনাজাতের আগে বয়ান করবেন দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ শামীম।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ইজতেমা শেষে এর মালামালগুলো পুলিশ ও প্রশাসনের হেফাজতে থাকবে। পরে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইজতেমার মালামাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমা ময়দানে এ বছর ১৫ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাবলিগ জামাতের পাঁচ দিনব্যাপী ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা।
গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি জোবায়ের অনুসারীদের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাদের পর্ব।
সোমবার সাদ অনুসারীদের ইজতেমা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একদিন বাড়ানো হয়। ফলে মঙ্গলবার সাদ অনুসারীদের পরিচালনায় ইজতেমার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমা।
মো. আমিনুল ইসলাম/এএম/এমএস