গুঞ্জন উঠেছে বিএনপি ছাড়ছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা কমিটির উপদেষ্টা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধা মো. শোকরানা। দলের এই প্রভাবশালী নেতা সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন। এ কারণেই তার ক্ষোভ এমনটিই শোনা যাচ্ছে। ঠিক একই কারণে রাজনীতি ছাড়ার পাশাপাশি তার আনুমানিক ৫শ কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়ার জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিষয়টি জানতে শোকরানার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, তিনি এখন বড় ছেলের পরিবারের সঙ্গে কানাডায় অবকাশ যাপনে রয়েছেন।
Advertisement
শোকরানার বগুড়ায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চার তারকা মানের হোটেল নাজ গার্ডেন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিক্রির জন্য তিনি ক্রেতা খুঁজছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শোকরানার একজন বন্ধু জানান, রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ভাবছেন বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারি শোকরানা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে অভিমান ও ক্ষোভে, দুঃখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা গেছে, বগুড়ার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী শোকরানা ১৯৯৯ সালে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। তখন তার লক্ষ্য ছিল বগুড়া-১ আসনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া। তখন থেকে তিনি বগুড়া জেলা বিএনপি ও নির্বাচনী এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে রয়েছেন। বগুড়ার এই সফল ব্যবসায়ী বিএনপিতে যোগদানের পর দলের সুসময় ও দুঃসময়ে সামনের কাতারে ছিলেন। তিনি দেশ স্বাধীনের আগে বগুড়ায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তুখোড় নেতা ছিলেন। যুবলীগ নেতা হিসেবে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। স্বাধীনতার পর তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির আড়ালে থাকার পর আশির দশকে তিনি ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বগুড়ার এই সফল ব্যবসায়ী বিএনপিতে যোগদানের পর দলের সুসময় ও দুঃসময়ে পাশে ছিলেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতারও হন তিনি।
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি- সোনাতলা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। এরপরও তিনি দলের সকল কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে নেতাকর্মী ও দলের পাশে ছিলেন।
Advertisement
দলের দুঃসময়ের কান্ডারি হিসেবে পরিচিত এ নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ আসনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে চরম হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হন। এ নির্বাচনে দলের সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলামকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়। শোকরানা দলে নিজের মূল্যায়ন না পেয়ে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্র জানায়, প্রায় ১৪ একর জমির উপর নির্মিত ফোর স্টার হোটেল নাজ গার্ডেন ইতোমধ্যে ১৫৭ কোটি টাকা দাম উঠেছে। তার প্রত্যাশা এর দাম ২০০ কোটি টাকা হতে পারে।
সোমবার শোকরানার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ছোট ছেলে রন্টির মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।
শোকরানার ঘনিষ্ঠজনরা বলেন, গল্পের ছলে শোকরানা তাদেরকে জানিয়েছিলেন বয়সের কারণে রাজনীতি থেকে অবসরের চিন্তা করছি। কারণ এখন আমার বয়স ৬৯ বছর। এই বয়সে দলকে আর কতটুকুই বা দেয়া সম্ভব। এ ছাড়া পরিবারকে সময় দেয়ার জন্যও অবসর নিতে চাই।
Advertisement
লিমন বাসার/এমএএস/জেআইএম