দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অচল অবস্থার অবসান হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ক্লাসে ফিরেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় সব অনুষদের ক্লাস। টানা ১৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে দফায় দফায় মিটিং শেষে রোববার রাত ১টায় বিষয়টির সমাধান হয়। রোববার সকাল ১০টায় বসা মিটিং শেষ হয় রাত ১টায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শফিউল আলমের ৩১ মার্চের মধ্যে চুক্তি বাতিল, বহিষ্কৃত দুই শিক্ষকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ১৪ নভেম্বর ও ২৯ নভেম্বরের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ, বেতন বৈষম্যের সমাধানের জন্য সর্বশেষ রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলনরত ৫৭ জন সহকারী অধ্যাপকের পে-স্কেল বাস্তবায়ন, তিন সদস্য বিশিষ্ট গ্রহণযোগ্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের দাবিগুলো ৩১ মার্চের মধ্যে সমাধানের পদক্ষেপ নেয়ার শর্তে অচল অবস্থার অবসান হয়।
ইউজিসি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, প্রশাসন, সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকদের ১৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
Advertisement
রোববার সকাল ১০টা থেকে ইউজিসি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসন, ইনক্রিমেন্টের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক ও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম।
দিনব্যাপী মিটিং করলেও সমাধানের পথ খুঁজে পাননি তারা। ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষকরা বের হতে চাইলে অডিটরিয়ামের গেটে তালা লাগিয়ে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ফলে সবাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ইউজিসি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, প্রশাসন ও শিক্ষক এবং প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা অবরুদ্ধ থাকেন। রাত ১টায় সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত হলে তালা খুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১৪ নভেম্বর থেকে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ইনক্রিমেন্টের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম। ফলে শিক্ষকদের আন্দোলনে প্রায় তিন মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রমে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও প্রশাসন।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার দাবি মেনে নিয়ে ২৭ জানুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক ও প্রগতিশীল শিক্ষকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা চালু হয়নি।
ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৩ মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এরই মধ্যে একাডেমিক ভবনে একাধিকবার তালা দেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও এবং একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
এরপরও কোনো সমাধান না হওয়ায় রোববার সকাল ১০টায় ইউজিসি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, প্রশাসন, সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা অডিটরিয়াম-২ এ আলোচনায় বসলে পাহারায় বসেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১টায় সমঝোতা হলে তালা খুলে দেয়া হয়। সোমবার সকলে ক্লাসে ফেরেন শিক্ষকরা। ফলে প্রাণ ফিরে পায় হাবিপ্রবি ক্যাম্পাস।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শফিউল আলম বলেন, টানা ১৫ ঘণ্টার মিটিংয়ে সব বিষয়ের সমাধান হয়েছে। সব সিদ্ধান্তের বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছেন। সোমবার থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে।
এমদাদুল হক মিলন/এএম/জেআইএম