মতামত

সীমান্তে উত্তেজনা, মিয়ানমারকে এগিয়ে আসতে হবে

বান্দরবানের থানচির বলিপাড়া মদক ও বাতংপাড়া এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দলের সঙ্গে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গোলাগুলির বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের সঙ্গে যে অরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে তা কতোটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তার যেন একটি আভাস পাওয়া গেল এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে। আশার কথা হচ্ছে এ দফায় প্রাণহানি কিংবা বড় ধরনের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। তবে ভবিষ্যতে বিচ্ছিন্নতাবদী এই সংগঠনটি যেন আরও ভয়ানক হবে উঠবে না তার নিশ্চয়তা কি। সে কারণেই বিচ্ছিন্নতাবাদী অস্ত্রধারী এই সংগঠনটিকে বাগে আনতে হবে। এ ব্যাপারে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে মিয়ানমারকেও।বুধবার বিজিবির একটি দল নিয়মিত টহলে বের হয়েছিল। তখন হঠাৎ করেই বিদ্রোহী গোষ্ঠী আক্রমণ করে। এতে বিজিবির একজন সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। জবাবে বিজিবিও পাল্টা আক্রমণ করে। এবং বিকাল তিনটা থেকে মিয়ানমার সীমান্তে যৌথ অভিযান শুরু করে বিজিবি। পাঁচ ঘন্টাব্যাপী অভিযানের এক পর্যায়ে অস্ত্রধারী আরাকান আর্মি পিছু হটে। ঘটনার শুরু মঙ্গলবার। এদিন রাতে বিজিবির টহল দল বড় মদক এলাকা থেকে দশটি এরাবিয়ান ঘোড়া উদ্ধার করে। ঘোড়াগুলো পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়। এই ঘোড়া উদ্ধারের কারণে তারা হামলা করেছে। সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির উৎপাত নতুন নয়। মূলত চোরাচালান, মাদকসহ নানাবিধ অপকর্মের সঙ্গে তারা যুক্ত। সীমান্তবাসীদের ওপর তারা নানা উৎপাত চালায়। বিশেষ করে স্থানীয়দের কে তারা পপি চাষ করতে বাধ্য করে। যা থেকে হেরোইন তৈরি হয়।অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে বিচ্ছিন্নবাদী আরাকান আর্মি সীমান্তে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্গম সীমান্ত আছে ২৮৪ কিলোমিটার। যার মধ্যে প্রায় ২৩০ কিলোমিটারই অরক্ষিত। এ সীমান্ত অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। যার অধিকাংশ স্থানে আকাশ পথ এবং নৌপথ ছাড়া পৌঁছানো সম্ভব নয়। কোনো বিওপি না থাকায় সেখানে অবাধে সন্ত্রাসীরা আসা-যাওয়া করে। সেজন্য অরক্ষিত সীমান্তে অবিলম্বে বিওপি স্থাপন করে তা বিজিবির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। সীমান্তে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে এটি অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে মিয়ানমারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিচ্ছিন্নবাদী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের জন্যও হুমকি। দুই দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আরাকান আর্মির দৌরাত্ম্য বন্ধ করা  সহজ হবে। মিয়ারমার আমাদের প্রতিবেশি দেশ। কথায় আছে প্রতিবেশি পাল্টানো যায় না। তাই যে কোনো মূল্য প্রতিবেশির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। কানেকটিভিটির এ যুগে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিচ্ছিন্নবাদী আরাকার আর্মির হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক` শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। এরফলে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার। এই অবস্থায় তৃতীয় কোনো অপশক্তি যাতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য উভয় দেশকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।এইচআর/আরআইপি

Advertisement