অর্থনীতি

ঝুঁকিতে এডিপি বাস্তবায়ন

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৫৮টির মধ্যে ১০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। যা মোট এডিপির ৭৩ শতাংশ।

Advertisement

অথচ সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে চার মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয় গড় অগ্রগতির বেশি ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে। অপর ছয়টি কম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের ব্যর্থতার মাত্রা বেশি। এদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি যথাক্রমে ১১ ও ২৩ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি (রোববার) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের। যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের গত ৭ মাসে এডিপির বাস্তবায়ন অগ্রগ্রতি পর্যালোচনা করা হয়।

Advertisement

সভা সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ মন্ত্রণালয়/বিভাগে এডিপির ৭৩ শতাংশ বরাদ্দ থাকায় তাদের অগ্রগতির ওপর সামগ্রিক এডিপির বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এরকম পরিস্থিতিতে ১০টির মধ্যে ৬টির জাতীয় গড় অগ্রগতির সমান ব্যয় করতে না পারায় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের বড় ব্যর্থতার কারণে এডিপির বাস্তবায়নে বেগ পেতে হবে।

এডিপির বাস্তবায়নে বেগ পাওয়া বা ঝুঁকিতে থাকার কারণ শুধু এই রেলপথ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের নয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ ১২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ২০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে ব্যর্থতার শীর্ষে রয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। বরাদ্দের বিপরীতে তাদের অগ্রগতি ১ শতাংশের নিচে, মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, যার অগ্রগতি ১ শতাংশ। আর ২ শতাংশ অগ্রগতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এবং ৩ শতাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের।

এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৭ শতাংশ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ শতাংশ, অর্থবিভাগের ১৪ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ১৫ শতাংশ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

Advertisement

ওই দিনের সভায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপি ও প্রস্তাবিত সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়।

তুলনামূলক চিত্র থেকে জানা যায়, তিনটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ৬০ শতাংশ বা ততোধিক আর্থিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে তারা সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে নেই। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ৭৪ শতাংশ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৬৭ শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৬২ শতাংশ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

ওই চিত্র থেকে আরও জানা গেছে, ৫০ থেকে ৫৯ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি অর্জনকারীদের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৫৯ শতাংশ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫৯ শতাংশ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৫৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৫২ শতাংশ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৫০ শতাংশ।

৪০ থেকে ৪৯ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি অর্জনকারী মন্ত্রণালয় সাতটি, ৩০ থেকে ৩৯ শতাংশ ১৫টি, ২০ থেকে ২৯ শতাংশ ১৬টি এবং ২০ শতাংশের নিচে আর্থিক অগ্রগতি অর্জন করেছে ১২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

এই হিসাবে অর্ধেকের বেশি সময় পার করার পর প্রকল্পের অগ্রগতির হার ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই গড় অগ্রগতির হার অর্জন করতে না পারা ৩০ শতাংশের নিচে থাকা ২৮ মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কারণে এডিপি বাস্তবায়ন এখন ঝুঁকিতে।

অন্যদিকে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ কোটি (৭৩ শতাংশ) টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৮২ হাজার ৩৩৫ কোটি, প্রকল্প সাহায্য ৪৭ হাজার ৬৬৫ কোটি এবং নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মোট ৪৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকা (৩৬ শতাংশ), যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৭ হাজার ৭৩১ কোটি (৩৪ শতাংশ), প্রকল্প সাহায্য ১৮ হাজার ৭৪৭ কোটি (৩৯ শতাংশ) এবং নিজস্ব অর্থায়ন ৯২৮ কোটি টাকা (৩২ শতাংশ)।

তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দাবি, তারা যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।

সভা সূত্র জানায়, এসব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এডিপির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নিবিড় মনিটরিং ও সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে তার অতিরিক্ত অর্থ সংশোধিত এডিপিতে সমর্পণ করে বরাদ্দ পুনর্নির্ধারণ করারও সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টিতে আমরা এখনও হাত দিইনি। যারা ভালো করেছে, তাদেরকে সভায় ধন্যবাদ জানিয়েছি। যাদের অগ্রগতি নিম্ন গতির, তাদেরকে বলেছি গতি বাড়াতে। যারা প্রকল্পের টাকা ব্যয় করতে পারবে না, তারা যেন আমাদেরকে তাড়াতাড়ি জানিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা এখনও ওই পর্যায়ে যাইনি। হয়তো আগামী এক মাসের মধ্যে যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে (সভায়) উপস্থিত সচিবরা আমাদের আশস্ত করেছেন, তারা ১০০ শতাংশ অগ্রগতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন।’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, গতি অর্জন করাই প্রধান লক্ষ্য। সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে দাবি এটাই ছিল। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকলে তা করতে রাজি আছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটা এ বছরই প্রথম নয়। প্রতি বছরই করা হয়। আমাদের যারা আছেন, তারাই এ কাজটা করেন। আমাদের কিছু রাষ্ট্রীয় বা পলিটিকাল অ্যাঙ্গেল থাকে। কী সে অ্যাঙ্গেল- গ্রামকে জোর দেয়া, প্রাথমিক শিক্ষাকে জোর দেয়া- এসব। এগুলো এবারও গুরুত্ব পাবে। এখানে নতুন কিছু নেই।’

তিনি এও জানান, প্রকল্পের গতি বাড়াতে অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবদের এই ধরনের সভা প্রতি তিনমাস পরপর চলতে থাকবে।

পিডি/এমবিআর/পিআর