ভারতীয় বিমানবাহিনী ১৪০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে শক্তিশালী সামরিক মহড়া চালিয়েছে। পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন রাজস্থানের পোখরানে এমন সময়ে এ মহড়া চালানো হলো যখন কাশ্মীরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৪০ জন সেনা নিহত হওয়া নিয়ে পাক-ভারত সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
Advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা হিসেবে মহড়া চালিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। উল্লেখ্য, কাশ্মীরের পুলওয়ামায় গত বৃহস্পতিবারের হামলার দায় স্বীকার করেছে জঈশ-ই-মোহাম্মদ।
ভারতীয় বিমানবাহনীর প্রধান মার্শাল বীরেন্দ্র সিংহ ধনোয়া বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো সময় উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমানবাহিনী।’ ভারতীয় বায়ুসেনা হিসেবে পরিচিত শক্তিশালী এই বাহিনীর প্রধান অবশ্য পাকিস্তান কিংবা পুলওয়ামা হামলার কথা উল্লেখ করেনিনি।
বিমানবাহনীর প্রধান মার্শাল বীরেন্দ্র সিংহ ধনোয়া আরও বলেন, ‘আমি গোটা জাতিকে আশ্বাস দিয়ে বলতে চাই ভারতীয় বিমানবাহিনীর সক্ষমতা ও প্রতিজ্ঞা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছে।’
Advertisement
সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভারতীয় বিমানবাহিনী তাদের আগাম পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ মহড়া চালিয়েছে। জরুরি নির্দেশনায় যাতে বিমানবাহিনী সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতসহ মিশন পরিচালনা করতে পারে তা নিশ্চিত করতেই এই মহড়া চালিয়েছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিসংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদের হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। গাড়িটিতে ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৫৪ জন সদস্য ছিলেন। হামলার ঘটনার পর সেনাবাহিনীকে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
হামলার পরদিন শুক্রবার মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক বিবৃতিতে বলেন, কাশ্মীরের ওই হামলায় পাকিস্তানের ‘সরাসরি হাত’ রয়েছে। আর এ সংক্রান্ত ‘অকাট্য প্রমাণ’ তাদের কাছে আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাকিস্তানকে একঘরে করতে ভারত সব রকম কূটনৈতিক চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।
মহড়া নিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের সামর্থের প্রমাণ দেখালাম যে, ভারতীয় বিমানবাহিনী যেকোনো সময় যেকোনো হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত। আমাদের এই সামর্থ দেশে থাকা জঙ্গিদেরকে খুব সহজেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। আমরা যে ভয়াবহ হামলা চালানোর সামর্থ রাখি তার জানান দিলাম মাত্র।’
Advertisement
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনী ওই মহড়ায় লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট ‘তেজা’, অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ছাড়াও ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্রবাহী বিমান ‘আকাশ’ এবয় আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম বিমানও ছিল।
এসব যুদ্ধবিমান ছাড়াও আকাশ থেকে ভূমিতে হামলা করতে সক্ষম উন্নতমানের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের মহড়া চালায় বিমানবাহিনী। বিমানবাহিনীর এই মহড়ায় সুখোই-৩০, মিরেজ-২০০০, জাগুয়ার, মিগ-২১, বিসন, মিগ-২৭, মিগ-২৯, আইএল৭৮, হারকিউলিস এবং এএন-৩২ নিয়ে মোট ১৩৭টি বিমান ছিল।
সামরিক এই মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন সেনাবহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর সম্মানসূচক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও ক্রিকেট তারকা শচীন টেন্ডুলকারও মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এসএ/আরআইপি