খেলাধুলা

বাংলাদেশের ‘মুলতান শোকগাথা’ মনে করালেন পেরেরা

গৌরব অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। যেখানে পরতে পরতে থাকে রোমাঞ্চ আর মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় দৃশ্যপট। আর ক্রিকেটের সেরা স্বাদটা পাওয়া যায় সাদা পোশাক ও লাল বলের খেলা টেস্ট ফরম্যাটেই। যার টাটকা উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সদ্যসমাপ্ত ডারবান টেস্ট।

Advertisement

কিংসমিডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে কুশল পেরেরা বীরত্বে ১ উইকেটের জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে ৭৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ৩০৪ রান তাড়া করে দলকে জিতিয়েছেন পেরেরা। নিজে খেলেছেন ১৫৩ রানের হার না মানা ইনিংস।

এই ম্যাচসহ টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় ১৪২ বছরের ইতিহাসে হওয়া ২৩৪৭ ম্যাচের মধ্যে রান তাড়া করে ১ উইকেটে জেতার ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১৩ বার। ১৯০২ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। আর ২০১৯ সালে এখনো পর্যন্ত শেষবারের মত জিতেছে শ্রীলঙ্কা।

এরই মাঝে ২০০৩ সালে ১ উইকেটে টেস্ট জয়ের দশম ঘটনায় জড়িয়ে ছিল বাংলাদেশের নাম। তবে সেটি বিজয়ী নয় বরং বিজিত দলের পাশে। সেটি ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজেডিময় এক টেস্ট। যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আশা জাগিয়েও শেষপর্যন্ত ইনজামাম উল হকের ব্যাটিংয়ের কাছে ১ উইকেটে হেরে গিয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনের দল।

Advertisement

বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুলতান টেস্টের কথা। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তখনো পর্যন্ত খেলা ২৩ ম্যাচে সেরা সাফল্য বলতে ছিল একটিমাত্র ড্র। বাকি ২২ ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের পাকিস্তান সফরের তৃতীয় এবং সবমিলিয়ে নিজেদের ২৪তম ম্যাচে জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরতে হয়েছিল।

ম্যাচের টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে হাবিবুল বাশারের ৭২, রাজিন সালেহর ৪৯ এবং জাভেদ ওমরের ৩৮সহ বাকিদের ছোট ছোট অবদানে ২৮১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম নয়জনই পান দুই অঙ্কের দেখা।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণি এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের মাপা পেস বোলিংয়ের জালে ধরা পড়ে পাকিস্তান। রফিক ৫টি এবং সুজন ৪টি উইকেট নিলে মাত্র ১৭৫ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশ পায় ১০৬ রানের বড়সড় লিড।

কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। উমর গুল এবং শাব্বির আহমেদ ৪টি করে উইকেট নিলে ১৫৪ রানে থামে বাংলাদেশ। এবার দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন রাজিন। এছাড়া খালেদ মাসুদ ২৮ এবং অলক কাপালি করেন ২২ রান। পাকিস্তানের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬১ রানের।

Advertisement

রান তাড়া করতে নেমে আবারো বাংলাদেশের বোলিং তোপে পড়ে পাকিস্তান। ইনজুরি শঙ্কা থাকায় একাদশে না থাকলেও বদলি ফিল্ডার হিসেবেই টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের ক্যাচ নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকেন চারে নামা ইনজামাম।

 

খালেদ মাহমুদ সুজন, মঞ্জুরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ রফিকদের বোলিংয়ের সামনে মাত্র ১৩২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা। তখনো তাদের জয়ের জন্য বাকী ছিলো আরো ১২৯ রান। এসময়ই ভুল করে ফেলে বাংলাদেশ।

আম্পায়ারদের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাদেও একটি ক্যাচ মিস, একটা রানআউটের সুযোগ মিস এবং উমর গুলকে 'ম্যানকাডিং' আউট করার সুযোগ পেয়েও তা না করার খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশকে। শেষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে একাই লড়াই করেন ইনজামাম।

প্রথমে সাকলাইন মুশতাকের (১১) সঙ্গে ৩২ এবং পরে শাব্বির আহমেদের (১৩) সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়ে দলকে দুইশ পার করান তিনি। তবু ২০৫ রানে অষ্টম উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। এরপরই শুরু হয় ইনজামামের সংগ্রাম।

নবম উইকেটে উমর গুলকে নিয়ে আরও ৫২ রান যোগ করেন তিনি। যেখানে গুলের অবদান ছিলো মাত্র ৫ রান। জয় থেকে পাকিস্তান যখন মাত্র ৪ রান দূরে, তখন গুলকে রানআউট করে আবারও আশা জাগান মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু দশম উইকেটে আর সুযোগ দেননি ইনজামাম। সে ওভারেরই শেষ বলে নিশ্চিত করেন দলের জয়।

১৭তম ওভারে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর উইকেটে আসা ইনজামাম অপরাজিত থাকেন ৯১তম ওভারে দলের জয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত। ২০ চারের সঙ্গে ১ ছয়ের মারে ২৩২ বলে ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে সেদিন মুলতানে বাংলাদেশের সুলতানি প্রতিষ্ঠা করতে দেননি মুলতানেরই খেলোয়াড় ইনজামাম উল হক।

এসএএস/আরআইপি