বিশেষ প্রতিবেদন

এক আপাদমস্তক রাজনীতিকের বিদায়

দল ভাঙ্গার কারিগর ছিলেন বটে, তবে দল গড়েছেন নিজের হাতেই। উপমহাদেশের রাজনীতির ধারায় কাজী জাফর আহমদের রাজনৈতিক মুন্সিয়ানা ছিল প্রশংসিত। এক সময়ের তুখোড় বাম নেতা কাজী জাফর রাজনীতিতে কখনো নেপথ্যে থেকে, আবার কখনো সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন বহুবার।ভাঙ্গা-গড়ার রাজনীতির জন্য কাজী জাফর আলোচিত হয়েছেন, হয়েছেন সমালোচিতও। সবশেষ গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গ ছেড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন কাজী জাফর আহমদ। ওই নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কাজী জাফরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আবারো ভেঙ্গে যায় এবং তিনি নিজেকে জাতীয় পার্টির মূল কর্ণধার দাবি করে বিশেষ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধীতা করে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট ২০১৫) সকালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।কুমিল্লার বিখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে ১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কাজী জাফর আহমদ জন্ম গ্রহণ করেন। খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন তিনি। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. (ইতিহাস) পাশ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম.এ. এবং এল.এল.বি. কোর্স সম্পন্ন করা স্বত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি কাজী জাফর।কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র জীবন শেষে কাজী জাফর আহমদ শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন।১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ তথা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।কাজী জাফর ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসেডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯-১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি পরলোকগমন করেন।# কাজী জাফর আর নেই# এক নজরে কাজী জাফর# কাজী জাফরের মৃত্যুতে খালেদার শোক# কাজী জাফরের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক

Advertisement

এএসএস/আরএস/আরআইপি