সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় দুইজন বাংলাদেশি অপহরণকারী পুলিশের গুলিতে নিহতের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও আরেক বাংলাদেশিকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে মাসের বেতন পেয়েই অপহরণের শিকার হন বাংলাদেশি আতিকুল ইসলাম (২৭)। এ বিষয়ে ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
Advertisement
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে কুয়ালালামপুরের পার্শ্ববর্তী মুতিয়ারা দামানসারা থেকে অপহৃত হন আতিকুল ইসলাম আতিক। তিনি (পাসপোর্ট নম্বর বিপি ০৯৩৬০৫২) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আব্দুস শহীদের ছেলে।
আতিকুল জানান, অপহরণকারী চক্রের কাছে তথ্য ছিল সে বেতনের টাকা তুলেছে। তারা আমপাং এর পানডান পারদানা নামক স্থানে নিয়ে তাকে মারধর করে ও কাছে থাকা মালয় রিংগিত ২৩০০ (বাংলাদেশি ৪৭ হাজার টাকা) ছিনিয়ে নেন। পরে তার মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এমনকি তাদের কথামতো তিনি বাংলাদেশে ফোন করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ছুরি দিয়ে হাতে আঘাত করা হয়।
প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার একপর্যায়ে আতিকুল ইসলামের সঙ্গে তাদের দেড় লাখ টাকায় রফা হয়। ওইদিন রাত ১০ থেকে ১১টার সময় +৮৮০১৭৪২৮৭১০৩৩ নম্বরে বিকাশে ১০ হাজার টাকা দেয়ার পর আর টাকা দেয়া সম্ভব হয়নি।
Advertisement
এমতাবস্থায় আতিকুল অজ্ঞান হয়ে গেলে অপহরণকারীরা মৃত ভেবে এলাকায় পুডুরায়ায় তাকে ফেলে চলে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় এক বাংলাদেশি ইমাম ভোর পাঁচটার দিকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগের পরপরই ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী ছয়জনের মধ্য থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গ্রেফতারকৃত পাঁচজনই বাংলাদেশি নাগরিক। বর্তমানে আতিকুল ইসলাম মালয়েশিয়ার সুংগাইবুলু হাসপালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে একের পর এক অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে সেদেশের প্রশাসন। ভিনদেশে এসে স্বদেশিদের অপহরণ ও চাঁদাবাজির কারণে আতঙ্ক বিরাজ করছে অনেকের মধ্যে। একাধিক প্রবাসী এই প্রতিবেদককে জানান, মালয়েশিয়ায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কমিউনিটি সংগঠন থাকলেও এ বিষয়ে সোচ্চারভাবে কোনো কিছু করতে দেখা যায় না।
যশোরের এক প্রবাসী বলেন, কমিউনিটি সংগঠনগুলো যদি প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াত তাহলে এমন ঘটনার জন্ম হতো না। অসহায় প্রবাসীদের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির দাবি জানান এ প্রবাসী।
Advertisement
চট্টগ্রামের প্রবাসী ফারুক এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশের কমিউনিটিগুলো যদি নির্যাতিত বাংলাদেশিদের পক্ষে থাকত এবং সাহস যোগাত তাহলে অপরাধীরা কখনোই সাহস পেত না অপহরণ করতে। তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতাদের কাছে প্রচার-প্রচারণাসহ পাশে থাকার জোর দাবি জানান ফারুক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. হেদায়েত ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘এসব বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার খুব আন্তরিক। তাই এ ধরনের ঘটনা কারও নজরে আসলে যেন পুলিশকে জানানো হয়। সেই সঙ্গে হাইকমিশনকেও জানালে হাইকমিশন মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ফলোআপ করতে পারে এবং বাংলাদেশকেও।’
এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, প্রবাসীকর্মীদের সুরক্ষায় আমরা ব্যবস্থা নেব। এ সময় তিনি স্বদেশিকর্মীদের পরস্পরের বিপদে পাশে থাকার এবং হাইকমিশনকে জানানোসহ সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
এসআর/এমএস