দেশজুড়ে

৫ বৃদ্ধ রিকশাচালকের সুখ-দুঃখের গল্প

পটুয়াখালী শহরে রিকশা চালিয়ে চলছে ৫ বৃদ্ধ চালকের জীবন। সাদা চুল-দাঁড়িতে জীবনের প্রায় শেষ ধাপে তারা। অবিশ্রাম আর কঠোর পরিশ্রমের ছাপ শীররও মুখে স্পষ্ট। বয়সের ভারে শরীরের চামড়া ঝুলে পড়েছে। এখন আর রিকশা চালানোর শক্তি নেই। তারপরও পেটের তাগিদে প্রতিদিন ভোরে এই ৫ বৃদ্ধকে রিকশা নিয়ে নামতে হয় রাস্তায়।

Advertisement

রিকশা চালানোর এই দীর্ঘ সময়ে তাদের জীবন জীবিকার মান বাড়েনি বরং কমেছে। কণ্ঠে হতাশার সুর। তারপরও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন শামসুল হক, বেলাল গাজী, হানিফ জোমাদ্দার, আবদুল কাদের হাওলাদার ও মীর হিরা।

শামসুল হক বলেন, আমার বাবা মাথা গোঁজার ঠাঁই রেখে যাননি। তবে আমি ৫১ বছর যাবৎ রিকশা চালিয়ে পৌর এলাকায় জায়গা কিনেছি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে আমি ও আমার বৌ সেখানে বসবাস করি।

তিনি বলেন, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রিকশা চালালে ২শ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। যা আয় হয় তা দিয়ে সুন্দরভাবে চলে যায় দু’জনের সংসার। যুয়ান (যুবক) চালকের গাড়িতে যাত্রী বেশি ওঠে। আমাদের মতো বৃদ্ধদের রিকশায় যাত্রী কম ওঠে।

Advertisement

একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন চালকের প্যাডেল রিকশায় প্রতিদিন একশ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। আর প্রতিদিন ৪০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া অটোরিকশায় প্রতিদিন ৫শ থেকে ৮শ টাকা আয় হয়। প্রতিদিন দুই চার্জের (পুরাতন ব্যাটারি) রিকশায় ২৫০ আর একচার্জের (নতুন ব্যাটারি) রিকশায় তিনশ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।

বেলাল গাজী জানান, প্যাডেল রিকশায় পয়সা কম পরিশ্রম বেশি। আবার ম্যাসিনের রিকশায় (অটো রিকশা) পরিশ্রম কম পয়সা বেশি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ন্যায্য ভাড়া চাইলে যাত্রীরা আমাদের সঙ্গে অনেক উচ্চবাচ্য করেন। সময়ে দুই একজনে চড়ও দেয়।

আবদুল কাদের হাওলাদার বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে রিকশা চালাই। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে সুমন বিএ পড়ছে আর ছোট ছেলে সম্রাট নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। স

তিনি বলেন, ছেলে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি নিলেও তিনি রিকশা চালানো ছাড়বেন না। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রিকশা চালাতে চান। মানুষকে দিন-রাত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেন। এটি তার ভালো লাগে।

Advertisement

অপরজন হানিফ জোমাদ্দার জানান, রিকশার গ্যারেজে থেকে শহরে রিকশা চালান। যা আয় হয় তা দিয়ে নিজে চলেন। পিছুটান বলতে কিছু নেই তার। জীবনে প্রথম প্রেমে স্যাঁকা খেয়ে তিনি আর বিয়ে করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তাই শেষ বয়সেও তিনি একাই আছেন।

এছাড়া মীর হিরা বলেন, ১০ বছর বয়স থেকে রিকশার হ্যান্ডেল হাতে নিয়েছি। সেই সময় রোজগার ভালো ছিল, সংসারে কোনো অভাব ছিল না। যখন আয় কমতে থাকে তখন বৌ আমাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। ছেলে-মেয়েও আমার খোঁজ খবর নেয় না।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বিধান মন্ডল জানান, যে বয়সে মানুষের আরাম আয়েশে দিন কাটানোর কথা সেই বয়সে এসকল বৃদ্ধ মানুষগুলোকে পরিশ্রম করতে হয়। কথায় বলে নিয়তিতে যা লেখা আছে তা ঘটবেই।

এফএ/এমএস