দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তাকে মোবাইল ও টেলিফোনে কল করে দুর্নীতির মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে আসছিলেন রাজু মিয়া। ফোনে কথাবার্তায় বোঝার উপায় নেই যে তিনি একজন ভুয়া দুদক কর্মকর্তা।
Advertisement
মামলার তদন্ত চলছে, চাইলে ফাইল গায়েব ও তথ্য গোপন করার ব্যবস্থা করা হবে-মর্মে প্রতারণার ফাঁদে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি ও আদায়ও করেছেন তিনি। তবে শেষমেশ ধরা পড়েছেন র্যাবের গোয়েন্দা জালে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে র্যাব মহাপরিচালক বরাবর একটি পত্র পাঠানো হয়। এতে দুদক জানায়, দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ফোন করে দুর্নীতির মামলা দায়ের ও মামলার তদন্ত চলছে মর্মে ভয় দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এরপর র্যাব সদর দফতর বিষয়টি অনুসন্ধানপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র্যাব-২-কে নির্দেশ দেয়। তদন্তে সত্যতার ভিত্তিতে প্রতারক রাজু মিয়াকে গতরাতে (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধীন গোদনাইলের একটি বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
Advertisement
আটক রাজু মিয়া (২৮) গাইবান্ধা সদরের কুটিপাড়ার আজগর আলীর ছেলে। আটককালে রাজু মিয়ার কাছ থেকে ৪টি মোবাইলফোন ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত ১২টি সিম উদ্ধার করা হয়।
রাজু মিয়ার জিজ্ঞাসাবাদের উদ্বৃতি দিয়ে র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করে দুর্নীতির মামলা রুজু হবে বা মামলার তদন্ত চলছে-মর্মে ভয় দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় ও হয়রানি করে আসছিলেন। এতে ভয়ে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মামলার ফাইল না চালু করা বা মামলা রুজু না করার অনুরোধ জানান এবং অর্থকড়ি দিয়ে হলেও ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। পরে তিনি বিকাশ নম্বর দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে।
সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাঙ্ক্ষিত টাকা প্রদান করলে দুর্নীতির মামলার ফাইল খারিজ বা নথিভুক্ত করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এভাবে রাজু মিয়া দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেন।
ভুয়া রেজিস্ট্রেশনযুক্ত সিম সংগ্রহ ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে রাজু জানান, তিনি নিজে একজন বিকাশের এজেন্ট ও সিম বিক্রেতা। নিম্নবিত্ত লোকজন, দিনমজুর, গার্মেন্টস কর্মী বা গৃহ পরিচারিকার মতো লোকজন সিম গ্রহণের জন্য তার কাছে আসলে তিনি তাদের অগোচরে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি ব্যবহার মাধ্যমে একের অধিক সিম বিক্রি রেজিস্ট্রেশন করে উক্ত সিমের মাধ্যমে বিকাশ হিসাব খুলতেন। মোবাইলফোনে পাল্টা হুমকি পেলে ওই সকল সিম সে নষ্ট করে ফেলতেন।
Advertisement
প্রতারকচক্রের অপর সদস্যদের আটক করতে র্যাব চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
জেইউ/এসআর/এমকেএইচ