ঐক্যবদ্ধ প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কতৃত্ব পুনরায় ফিরে পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিতি আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। বুধবার বার কাউন্সিলের নির্বাচনে সাধারণ সাতটি আসনের মধ্যে তিনটিতে এবং সাতটি গ্রুপ আসনের মধ্যে ছয়টিতেই এগিয়ে রয়েছে তারা। এর ফলে বার কাউন্সিলের ১৪টি আসনের মধ্যে ১০টিতে জয় লাভ করে সমন্বয় পরিষদ। অর্থাৎ সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে ১০ জন বিজয় অর্জন করেছেন বলে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা জানিয়েছেন।সব কেন্দ্রের ফলাফল বার কাউন্সিলে পৌঁছানোর পর সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিকেল চারটায় প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করবেন বলে কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নাজমুল আহসান জানান।বার কাউন্সিলের ১৪টি সদস্য পদের বিপরীতে এবার চারটি প্যানেল থেকে মোট ৬১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সারাদেশের ৭৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৭০টি কেন্দ্রের ফলাফল জানা গেছে, তাতে সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ এগিয়ে রয়েছে। সাত অঞ্চলের পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ এবং দুটিতে বিএনপির সমর্থিতরা এগিয়ে।সব মিলিয়ে সাধারণ আসনে ১৪টি পদের প্রায় ১০টিতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পয্যন্ত সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। এতে প্রথমে অবস্থান করছেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যালে) প্রার্থী আব্দুল বাসেদ মজুমদার, দ্বিতীয় অবস্থানে জাতীয়তাবাদী ঐক্য পরিষদের (নীল প্যানেল) প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী খন্দকার মাহবুব হোসেন, চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থী আব্দুল মতিন খসরু, ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী এজে মোহাম্মদ আলী এবং সপ্তম অবস্থানে রয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী সানাউল্লাহ মিয়া। এছাড়া সাদা প্যানেলের প্রার্থী জেড আই খান পান্না অষ্টম অবস্থানে। গ্রুপ আসনে যারা এগিয়ে : সাতটি গ্রুপ আসনের মধ্যে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থীরা ছয়টিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে যাচ্ছে সূত্র জানিয়েছেন। এরা হলেন- এ-গ্রুপ থেকে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, বি-গ্রুপ থেকে এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, সি-গ্রুপ থেকে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, ই-গ্রুপ থেকে পারভেজ আলম খান, এফ-গ্রুপ থেকে মো. ইয়াহিয়া ও জি-গ্রুপ থেকে মো. রেজাউল করিম। একমাত্র ডি-গ্রুপ থেকে জাতীয়তাবাদী ঐক্য পরিষদের (নীল প্যানেল) প্রার্থী কাইমুল হক জয় লাভ করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু প্যানেলভুক্তভাবে সরকারিদল আওয়ামী লীগ মনোনীত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা পয্যন্ত সরজমিনে বেসরকারিভাবে পাওয়া এসব তথ্য জানা গেছে। সাধারণ আসনে ১৪ জনের মধ্যে যারা এগিয়ে আছে তাদের সর্বশেষ ভোটের হিসাব নিচে রয়েছে : আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এর সাদা প্যানেল থেকে সাধারণ আসনে ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম ভোট-১৪১৮১, আব্দুল বাসেত মজুমদার ১৫২৩৫, আব্দুল মতিন খসরু -১৪৩৯৭ ,ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ-১২৮০৯, জেড আই খান পান্না- ১৩১৯০, শ. ম রেজাউল করিম -১৩১৫৯ ভোট পেয়েছেন।অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা ঐক্য নীল প্যানেলে সাধারণ আসনে খন্দকার মাহবুব হোসেন ভোট পেয়েছেন- ১৪৩৫৪, এ. জে মোহাম্মদ আলী -১৩২০১, এ. এম মাহবুব উদ্দিন -১৫১৩৮, মো. সানাউল্লাহ মিয়া- ১৩০৭৪, মো. বদরুদ্দোজা বাদল -১২১৩৭, মো. বোরহানউদ্দিন -১২৩৩৬।তার আগে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের ৭৮টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে সারাদেশে মোট ৪৩ হাজার ৩০২ জন ভোটার ছিল। তিন বছর মেয়াদি এ কমিটির ১৪টি পদের বিপরীতে চারটি প্যানেল থেকে আইনজীবীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাদা ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন নীল প্যানেল মূলত লড়াই হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সাদা প্যানেল ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের ব্যানারে নীল প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর বাইরে আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট ও আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামে আরো দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রতি বারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের দুটি প্যানেলের মধ্যে এ নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এবার দেশের সব বারে জয়ের আশা করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী ঐক্য পরিষদও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।তিন বছর পরপর বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়। সারাদেশের আইনজীবীরা মোট ১৪ জনকে ভোটের মাধ্যমে সদস্য নির্বাচিত করেন। এর মধ্যে সাধারণ আসনে সাতজন এবং সাতটি অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে আরও সাতজন নির্বাচিত হন। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ১৪ জন পরে নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটি করে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। ১৫ সদস্যের কমিটিতে সাধারণ ও আঞ্চলিক আসনে সাতটি করে মোট ১৪টি নির্বাচিত পদ। বাকি অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে থাকেন। এর আগে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিতরা নয়টি এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা পাঁচটি পদে নির্বাচিত হন। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ছাড়াও আইনজীবী ঐক্য পরিষদ ও আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট নামে আরো দুটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।## বার কাউন্সিল নির্বাচনে এগিয়ে আওয়ামী লীগএফএইচ/এসএইচএস/বিএ
Advertisement