জাতীয়

বাঁচার জন্য হাসপাতালে এসেও সংকটাপন্ন জীবন

চারদিকে হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি, ‘আগুন’, ‘আগুন’। বাইরে এসে দেখি ধোঁয়া, উপরে আগুন। কিছু ভাবারই সময় পাইনি। রোগী নিয়ে সোজা খোলা আকাশের নিচে। এভাবেই জাগো নিউজের কাছে নিজের অভিব্যক্তি জানান সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী উর্মির বাবা বাবুল ফকির। আগুন লাগার আতঙ্কে তিনিও মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসেন।

Advertisement

আরও পড়ুন >> সোহরাওয়ার্দীর আগুন নিয়ন্ত্রণে

বরিশাল থেকে গত রোববার মেয়ে উর্মিকে নিয়ে ঢাকায় আসেন বাবা বাবুল ফকির। ভর্তি করান সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আগামী শনিবার উর্মির গলায় অপারেশন হবার কথা ছিল। কিন্তু এখন সেসব ভাবার সুযোগ নেই বাবুল ফকিরের।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আগুনের ভয়ে হাসপাতালের বাইরে এসেছি। আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। খোলা আকাশের নিচে তো রোগীকে নিয়ে থাকা যায় না। অন্য কোনো হাসপাতালে যাব, এখানে আর নয়।’

Advertisement

হাসপাতালের ১নং ওয়ার্ডের ৮৫নং সিটের রোগী ঢাকা উদ্যানের আব্দুল গণি খাঁ। তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘এখানে স্বামীকে বাঁচানোর আশায় ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু এখন উল্টো মরার দশা। প্রথমে নার্সরা বলছিল, আগুন নিভে যাবে। কিন্তু শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি স্বামীর আগুনের ধোঁয়ায় আরও খারাপ অবস্থা। তাই আর ঝুঁকি নেইনি, বেরিয়ে এসেছি।’

ব্রেইন স্ট্রোকের পর বাবা আব্দুল আলেককে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ছেলে জহুরুল ইসলাম। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভর্তি করেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। ১নং ওয়ার্ডের ১৫নং বেডে জায়গাও হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫৫মিনিটে ধোঁয়া দেখে আর আগুনের খবরে রোগীকে নিয়ে ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এখন কী করবেন, কোথায় যাবেন; কোনো দিশা পাচ্ছেন না।

৫নং ওয়ার্ডের রোগী মজনু মিয়া। ব্রেইন স্ট্রোকের পর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থেকে এখানে আসেন। তার নাতি রানা কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, জীবন সংকটাপন্ন তার। একটা অ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজ করেছি, কিন্তু অক্সিজেন নেই। আর বুঝি নানাকে বাঁচাতে পারব না। শেষ চেষ্টায় কুর্মিটোলা যাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

আরও পড়ুন >> সোহরাওয়ার্দীর রোগীরা নিরাপদে

Advertisement

ক্ষোভের সঙ্গে রোগী জাকিয়া বেগমের স্বজন শারমিন বেগম বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মাকে মেডিসিন বিভাগের ৪নং ওয়ার্ডে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু আগুনের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট আরও বেড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় হাসপাতালেও থাকা হলো না।

‘মায়ের বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। এত বড় হাসপাতাল, কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগী-স্বজনদের আহাজারি আজ মৃত্যুর সমান। এটা মানা যায় না। মাকে বাঁচাতে এসে নিজেরও মরার দশা।’

প্রসঙ্গত, সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলার স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পর্যায়ক্রমে ইউনিট বাড়িয়ে ১৮টি করা হয়।

প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতে ঘটনা ঘটেনি। হাসপাতালের সব রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, রোগীরা নিরাপদে রয়েছেন। তবে আইসিও সেবা বা মুমূর্ষু রোগীদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১০০টি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে, এসব অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে কোনো রোগী নেই, সব রোগীকেই নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে- যোগ করেন তিনি।

জেইউ/এমএআর/পিআর