ভালোবাসা ক্ষণিকের নয়। ভালোবাসা চিরন্তন। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীর জন্য কিংবা বয়সের ফ্রেমে বাঁধা নয়, এটা প্রসারিত হয় বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনসহ সবার মাঝেই। তবে ভালোবাসা দিবস যুগলদের মনের উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
Advertisement
ভালোবাসার গানে, ভালোবাসার মহানুভূতির কাছে নিজেকে নিশ্চিন্তে সঁপে দিতে এসেছে ভালোবাসার বিশেষ দিবস বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। পৃথিবীব্যাপী আজকের এই দিনটি সব যুগলের জন্য একটু বেশিই বিশেষ। ঋতুরাজ বসন্তের দ্বিতীয় দিনে ভালোবাসা দিবসে বাঙালি মনের ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসের যেন কোনো কমতি নেই। তাইতো তারা বেড়িয়ে পড়েছেন ভালোবাসা প্রকাশের জন্য। ফলে রাজধানী জুড়েই তরুণ-তরুণী, যুগলের ঢল।
ভালোবাসার এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে প্রেমিক যুগলের যেন আনন্দ আর ধরছে না। মেয়েরা পরেছেন লাল শাড়ি, সঙ্গে হাতে লাল গোলাপ হাতে। পুরুষরাও বা কমতি কিসের? বাহারি পাঞ্জারি পরে প্রিয় মানুষটির হাতটি ধরে ভালোবাসার আনন্দের জোয়ার ভাসছেন তারাও। সবার হাতেই আছে নানা ধরনের বাহারি দৃষ্টিনন্দন সব ফুল। আর এই ভালোবাসার ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে পুরো রাজধানী জুড়েই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা, শাহবাগ, অমর একুশে বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা, হাতিরঝিলসহ রাজধানীর পুরো এলাকা জুড়েই তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে আছে।
Advertisement
রাজধানী জুড়ে যুগল, প্রেমিক-প্রেমিকা হাত ধরে ঘুরছেন, কেউবা পাশাপাশি বসে গল্প করছেন। কেউ কেউ রেস্টুরেন্টে বসে তাদের সুন্দর মুহূর্ত উদযাপন করছেন। বাদ যায়নি হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে করে ঘুরাও। সকাল থেকেই হাতিরঝিলেও ছিল যুগলদের ব্যাপক উপস্থিতি। প্রায় সবার হাতে হাতে ছিল সৌন্দর্য আর ভালোবাসার প্রতীক দৃষ্টিনন্দন ফুল।
পৃথিবীতে এমন মানুষ নেই বললেই চলে যে ফুল ভালোবাসে না। ফুলের যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনি রয়েছে স্বর্গীয় সুখানুভূতিও। ফুলের প্রতি ভালোবাসা চিরন্তন। ফুল শব্দটা মনকে আলোড়িত করে। ‘ফুল’ কথাটার মাঝেই লুকিয়ে আছে ভালোলাগার পরশ।
ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর হাতিরঝিলে এসেছেন একদল বেসরকারি শিক্ষার্থীদের দল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন প্রেমিক যুগল আর বেশিরভাগরাই বন্ধু-বান্ধব। তাদের মধ্যে একজন সুমাইয়া আক্তার চাঁদনী। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছি। সঙ্গে প্রিয় মানুষটিকেও নিয়ে এসেছি। আজ বিশেষ দিন। তাই বিশেষ মানুষটির সঙ্গে সারাদিন ঘুরব। দিনের শুরুতে সে আমাকে এবং আমি তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। ভালোবাসা দিবস যুগলদের কাছে আসলেই একটি বিশেষ দিন।’
পাশেই থাকা আরেক যুগল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সব যুগলরা বিশেষ প্ল্যান করে সারাদিন ঘোরাফেরা, ফুলেল শুভাচ্ছে বিনিময়, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, গিফট আদান-প্রদানের মাধ্যেমে অতিবাহিত করে। এটা আমাদের কাছে আসলেই একটি বিশেষ দিন।
Advertisement
একদিনের ফুল ব্যবসায়ীতে সয়লাব রাজধানী
ভালোবাসা দিবসে ‘ফুল’ নামক উপকরণটা অঙ্গাঙ্গিভাবেভাবেই জড়িত। তাই এই বিশেষ দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় দেখা গেছে, প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানাতে সুনীল তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছিলেন ১০৮টা নীলপদ্ম কিন্তু এই সময়ে এসে ভালোবাসা দিবসে নীলপদ্ম পাওয়া না গেলেও পাড়া-মহল্লা, অলিগলিত সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে নানা রঙের দৃষ্টিনন্দন নানা ফুল।
প্রেমিক যুগল, তরুণ-তরুণীসহ সবার কাছেই ভালোবাসা দিবসে ফুলের কদর বেড়ে যায়। আর ফুলের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে রাজধানীর বাণিজ্যিক ফুলের দোকান ছাড়াও পাড়া, মহল্লা, অলিগলিতেও ফুল বিক্রি হয় কয়েকগুণ বেশি দামে। এই বিশেষ দিনে ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে একদিনের ফুল ব্যবসায়ীতে সয়লাব হয়েছে পুরো রাজধানীর পাড়া-মহল্লা আর অলিগলি সবখানেই।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলিতে ফুলের পসরা সাজিয়ে ফুল বিক্রি করছেন অস্থায়ী ফুল বিক্রেতারা। এসব অস্থায়ী বা একদিনের ফুল বিক্রেতার বেশিরভাগই ছাত্র অথবা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী। ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রিতে বেশি লাভের আশায় তারা একদিনের জন্য হয়ে গেছেন ফুল ব্যবসায়ী। তারা একদিনের ফুল বিক্রেতা হলেও তাতে কী! তারাও পাড়া-মহল্লাতে ফুল বিক্রি করছেন চড়া দামে।
এসব দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অস্থায়ী এসব দোকানে মূলত গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকলেও গোলাপের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চেরি, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ধরনের ফুলের তোড়া।
রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন গুদারাঘাট এলাকায় অস্থায়ী একদিনের বিক্রেতা হিসেবে ফুল বিক্রি করছিলেন রনি আহমেদ ও তার বন্ধুরা।
রনি আহমেদ বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা থাকে। তাই অনেক তাই সখ করে ফুলের দোকান দিয়েছি বন্ধুরা মিলে। পাইকারি এসব ফুল কিনে নিয়ে এসে আমরা একটু বেশি দামে প্রেমিক-প্রেমিকা, তরুণ-তরুণীদের কাছে বিক্রি করছি।’
ফুলের দাম সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গোলাপ বিক্রি করছি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। রজনীগন্ধার স্টিক ১৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, জারবেরা ফুল ৪০ থেকে ৬০ টাকা, অর্কিড স্টিক ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গ্লাডিওলাস রঙ ভেদে ৩০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছি।’
এএস/এসআর/এমকেএইচ