জীবিকার তাগিদে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালের শেষের দিকে ইরান হয়ে লেবাননে প্রবেশ করেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বলরামের চক গ্রামের ইসহাক চৌধুরীর মেজো সন্তান ইসমাইল চৌধুরী আকরাম। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে লেবাননসহ আশপাশের দেশ থেকে প্রায় ৫০০ জন তরুণ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ইসমাইল চৌধুরী আকরাম ছিলেন অন্যতম।
Advertisement
ইরানে থাকাকালীন ইরান দূতাবাসে ভাগ্যক্রমে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে দেখা হলে নেতার কথায় উৎসাহিত হয়ে তিনি পিএলও’র হয়ে যুদ্ধ করেন। অনেক বাংলাদেশিই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আর যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই লেবাননে প্রবাস জীবনে লড়াই করছেন।
ঠিক তেমনি ইসমাইল চৌধুরী আকরাম প্রবাস নামক জীবন যুদ্ধে লড়াই করে ক্লান্ত দেহে দেশে ফিরে বার্ধক্যজনিত কারণে সিলেটের স্থানীয় হাসপাতালে ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
৪২ বছরের দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আকরাম চৌধুরী অত্যন্ত মিশুক, পরোপকারী, সৎসাহসী এবং সর্বজনপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। সদা সত্য বলা, সব সময় সৎ থাকা, বিপদ সঙ্গে করেও অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া এতসব গুণ নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছিলেন।
Advertisement
এতসব গুণ এক জনমে অর্জন করা এবং সারাজীবন লালন করে যাওয়া কঠিন। তবুও তিনি করেছিলেন। নিঃস্বার্থ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে পরিচিত। অতি সাধারণ এই মানুষটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লেবানন শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সাধারণ জীবনযাপনের কারণেই তিনি লেবাননের সামাজিক রাজনীতিক অঙ্গনসহ সাধারণ প্রবাসীদের কাছে একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন।
তিনি লেবাননে একজন নিয়মিত বৈধ রেমিট্যান্স যোদ্ধা থাকলেও এ বছর ইকামা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে দেশে চলে যেতে বাধ্য হন। ৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার তিনি বৈরুতের মায়া ছেড়ে দেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। এ সময় তার প্রিয় প্রবাসীরা তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গিয়ে সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
রোববার তিনি দেশে পরিবারের নিকট পৌঁছার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এদিকে তার মৃত্যুর খবর লেবাননে এসে পৌঁছালে তার নিকটতম বন্ধু-বান্ধবসহ সব প্রবাসীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। ইতোমধ্যেই এই প্রিয় মানুষটির মৃত্যুতে লেবাননের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে আলাদা আলাদা বিবৃতি দিয়েছেন।
Advertisement
এমআরএম/জেআইএম