খেলাধুলা

মিঠুনের মতো ধরে খেললেই হতে পারত লড়াকু পুঁজি

খাদের কিনারায় পড়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ২৩২’এ গিয়ে ঠেকা। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্দ নয়। কিন্তু শেষ অবধি বোঝা গেল ঐ রান নেহায়েত অপ্রতুল। নিউজিল্যান্ডের পিচে ২৩০-২৪০ রান করে পার পাওয়া যাবে না। ৩০০’র আশে পাশে যেতে না পারলে শেষ হাসি কঠিন।

Advertisement

সেই বড়সড় রান করতে হলে দরকার প্রথম দিকের যেকোন একজনের একটি দীর্ঘ ইনিংস। যেমনটা উপহার দিয়েছিলেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ (১২৩ বলে ১২৮)। একই ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি ছিল ওপেনার সৌম্য সরকারেরও (৫৮ বলে ৫১) আর শেষদিকে সাব্বিরের ঝড়োগতির ৪০ (২৩ বলে পাঁচ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কা)। তারই সম্মিলিত ফল ছিল ২৮৮।

পরে তা নিয়ে তুমুল লড়াইও করা সম্ভব হয়েছিল। কিউইরা শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে জিতলেও পুরো ম্যাচে লড়াই হয়েছিল সেয়ানে সেয়ানে। মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরি আর শেষ দিকে ফাস্টবোলার টিম সাউদির ছয় বলে ১২ রানের ইনিংসে ৭ বল আগে লক্ষ্যে পৌঁছেছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা।

কিন্তু আজ তারচেয়ে ৫৬ রান কম নিয়ে আর কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। হারতে হয়েছে ৮ উইকেটে। খেলা শেষ হয়েছে ৩৩ বল আগে। পরিণতি যাই হোক, টিম বাংলাদেশকে ২৩০’র ঘর পর্যন্ত নিয়ে দিন শেষে ভক্তদের প্রশংসাধন্য মোহাম্মদ মিঠুন আর সাঈফউদ্দীন।

Advertisement

সবার কথা একটাই- ঐ দুই ব্যাটসম্যান এত চমৎকার খেললেন তাহলে বাকিরা পারলেন না কেন? সেটাই আসল কথা। আসলে মিঠুন আর সাঈফউদ্দীন সময়ের দাবি মেটাতে যা দরকার ছিল তা করেছেন তাই তারা মোটামুটি সফল। রানও পেয়েছেন।

দুজনের ভূমিকা ছিল দুরকম। মিঠুন একদিক আগলে বিপর্যয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেছেন। আর শেষ দিকে নয় নম্বরে নামা সাঈফউদ্দীন সাহস নিয়ে রান চাঁকা সচলের কাজ করেছেন। মুশফিকুর রহিম আউট হবার পর মিঠুন যখন পাঁচ নম্বরে নামেন তখন দলের রান ৩ উইকেটে ৪২।

সেখান থেকে একদিক আগলে রাখা ছিল একান্তই জরুরী। সেই কাজটি যতটা সম্ভব পালন করেছেন মিঠুন। অযথা ও অপ্রয়োজনীয় শট খেলেননি। ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার চেষ্টাও ছিল কম। একদম বেসিক মেনে ভাল বলকে সমীহ দেখিয়ে খেলেছেন। তিন কিউই ফাস্ট বোলার বোল্ট, হেনরি আর ফার্গুসনের অফস্টাম্পের বাইরের দ্রুতগতির এক্সপ্রেস ডেলিভারি এবং শর্ট বলগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থেকেই আসলে লম্বা সময় উইকেটে কাটিয়ে দেন মিঠুন।

আর তাই শেষ পর্যন্ত ৯০ বলে ৬২ রানের ইনিংস যোগ হয় নামের পাশে। তরুণ সাইফউদ্দীন খেলেন ৫৮ বলে ৪১ রানের সাহসী ইনিংস। অষ্টম উইকেট জুটিতে যোগ হয় মূল্যবান ৮৪ রান। ১৩১ রানে ৭ উইকেট পতনের পর মিঠুন-সাইফউদ্দীন জুটিতেই ২৩০’র ঘরে পা রাখা।

Advertisement

যার ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৬৩ (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুবাইতে এশিয়া কাপে) সেই মিঠুন রান পেয়েছেন। খুব বড় ইনিংস সাজাতে না পারলেও প্রায় ৪০ ওভার উইকেটে টিকে ছিলেন। নয় নম্বরে নেমে সাইফউদ্দীনও চল্লিশের ঘরে পা রেখেছেন ৫৮ বল খেলে।

এই ইনিংস দুটির সাথে আট নম্বর ব্যাটসম্যান মিরাজের ২৭ বলে ২৬ রানের ছোট্ট অথচ মোটামুটি কার্যকর ইনিংসও আছে। খালি চোখে এই তিন জনের হাত ধরে বিপর্যয় এড়িয়ে দু’শো পাড় হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঐ তিনজনের ব্যাটিংয়ে একটি পরিষ্কার সত্য ফুটে উঠেছে।

তা হলো, কন্ডিশন অনুযায়ী ব্যাটিংটা হয়নি। এমন পিচে নতুন বলে শুরুতে রয়েসয়ে খেলার বিকল্প নেই। সেটাই হয়নি। সেটা কেন হয়নি? তার কারণ খুঁজে বের করতে হলে সবার আগে আসবে দেশে স্লো ও লো পিচে খেলে এসে নিউজিল্যান্ডে ফাস্ট ও বাউন্সি পিচে খেলতে নেমেই আসলে তোপের মুখে পড়া।

নেপিয়ারের পিচে গতি ছিল প্রচুর। ফার্গুসন অবলীলায় ১৫০ কিলোমিটারের ওপরে বল করেছেন। বোল্ট আর হেনরিও কম যাননি। তাদের বলে বাউন্সও ছিল প্রচুর। বল পড়ে বুক সমান উচ্চতায় উঠে এসেছে বারবার। ফাস্ট বোলারদের বল গ্লাভসে নিয়ে কিপারকে মাঝে মধ্যে হাত ঝারা দিতে গেছে।

অবশ্য ম্যুভমেন্ট তেমন ছিল না। সেটা একরকম স্বস্তির উপাদান ছিল। একটু দেখে খেললে উইকেটে টিকে থাকা যেত। এই বাড়তি গতি আর বাউন্সী পিচে যেটা প্রথমেই দরকার তা হয়নি। তা হলো, উইকেটে গিয়ে চটকদার মার বা আক্রমণাত্মক ঢং এবং ফ্রি স্ট্রোক খেলা বাদ দিয়ে কিছুটা সময় রয়ে সয়ে খেলা এবং উইকেটের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া।

তারপর উইকেটের পেস-বাউন্স আর বলের ম্যুভমেন্ট বুঝে ধীরেধীরে ইনিংসকে সাজিয়ে এক সময় খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা। সেই কাজটি প্রথম দিকে কেউ করতে পারেননি। করার চেষ্টা ছিল না।

একমাত্র তামিম ছাড়া সবাই শটস খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন। তামিম শুধু অফস্টাম্পের বাইরে পরাস্ত হয়েছেন। লিটন বলের ম্যুভমেন্ট ঠাউরে মারতে গিয়ে বোল্ড। সৌম্য মাথা বরাবর বলকে পুল করতে গিয়ে মিস টাইমে রিটার্ন ক্যাচ। মুশফিক এক ওভারে পর পর বেশ কয়েকটি ডেলিভারি না খেলে ছেড়ে শেষ বলে রানের নেশায় বুঁদ হয়ে ক্লোজ টু বডি স্কয়ার কাট করতে গিয়ে প্লেইড অন আর মাহমুদউল্লাহ ১৫১ কিলোমিটার গতির বলে দূর থেকে কাট খেলতে গিয়ে আউট।

এছাড়া সাব্বির আর মিরাজ আউট হয়েছেন স্পিনারদের বল সুইপ খেলতে গিয়ে। সাইফউদ্দীনও ভাল খেলার পর ঐ সুইপ শটেই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন মিড উইকেটে। শুরুতে পেসারদের বলে একটু বেশী তাড়াহুড়ো করা এবং বাড়তি শটস খেলতে যাওয়া আর অবস্থা বদলের পরে স্পিনারদের বলে সুইপ খেলার প্রবণতা- দু’য়ে মিলেই এমন অবস্থা।

দেশে বিশেষ করে হোম অফ ক্রিকেট শেরে বাংলায় ঠেলাগাড়ির গতি আর হাটু ও গড়পড়তা পেট সমান উচ্চতার পিচে এক মাসের বেশী সময় বিপিএলে ১২ থেকে ১৫ ম্যাচ খেলার পর নামমাত্র অনুশীলন করে এমন দ্রুতগতি আর বাড়তি বাউন্সের পিচ- যেখানে ফার্গুসন ১৫০ কিলোমিটারের ওপর গতিকে বল করেছেন, সেখানে প্রথম খেলতে নেমে শুরুতে একটু আধটু সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিকও নয়।

নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে আর কদিন প্র্যাকটিস করতে পারলে অবশ্যই এরচেয়ে ভাল করা সম্ভব ছিল। সে ক্ষমতা আছে টাইগারদের। পরের দুই ম্যাচে সে সামর্থই দেখতে চান টাইগার সমর্থকরা।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম