আন্তর্জাতিক

সন্ধ্যা নামলেই চোখে রক্তের ধারা

সন্ধ্যা নামলেই দু’চোখ বেয়ে রক্ত ঝরে। শুধু চোখ দিয়েই নয় বরং নাক, ঠোঁট দিয়েও রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এমন অসুখে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৩)। তার অবস্থা এমন হয়ে পড়েছিল যে, বাড়ির লোকজনও তার কাছে ঘেষতে ভয় পেতো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই সবাই আতঙ্কে থাকত এই বুঝি শুরু হয়ে যাবে রক্তের খেলা।

Advertisement

শারীরিক কষ্টের সঙ্গে দুর্বিসহ মানসিক যন্ত্রণাও বইতে হয়েছে সুস্মিতাসহ পুরো পরিবারকে। পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রিতে (আইওপি) চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। চিকিৎসার পর এখন কিছুটা স্বস্তিতে আছেন।

তিনি জানান, আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সাহস পেতেন না। নিজেকে রাক্ষসী মনে হতো। চোখের কোণে দেড় সেন্টিমিটার জায়গা জুড়ে রক্ত জমাট বেধে থাকত। সুস্মিতার স্বামী মানসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মী। তিনি জানান, প্রথম দিকে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল তার স্ত্রীর, তারপরই রক্ত বেরুনো শুরু হয়। আর এমনটা হলে অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলত সুস্মিতা।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রথমে স্থানীয় এক নিউরোলজিস্ট দেখেছিলেন সুস্মিতাকে। তার ওষুধ কাজ করেনি। তাঁর পরামর্শেই সুস্মিতাকে পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে দেখানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি বিরল ডিসথাইমিয়া ইউথ সাইকোজেনিক পারপিউরাতে আক্রান্ত হয়েছেন। পিজির আইওপির চিকিৎসক প্রদীপ সাহা জানান, রক্তের উপাদানে সমস্যার কারণে অনেক সময় এমনটা হতে পারে। কিন্তু সেটাও বিরল। ১০ লাখে একজনের হয়। কিন্তু টেনশন চেপে রাখার কারণে চোখ দিয়ে রক্তের ধারা অত্যন্ত বিরল। ২০ লাখে একজনের হয় কি না সন্দেহ।

Advertisement

কিন্তু সন্ধের পরই কেন এমন উপসর্গ দেখা যায় তা সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলছেন এটা কাকতালীয়। কিছু মানুষের সকালের দিকে হতাশা বেশি গ্রাস করে। কারও আবার সন্ধ্যার পর। সুস্মিতা দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত। শেষের দিকে দিনের বেলায়ও রক্ত বেরিয়েছে চোখ থেকে। টানা চোদ্দ মাস চলেছে রক্তের অত্যাচার। তবে, গত পাঁচ মাসে একবারও রক্তপাত হয়নি। এমনটাই জানালেন সুস্মিতা।

তিনি বলেন, আমার চোখ থেকে এতটাই রক্ত বেরুতো যে বালিশ ভিজে যেত। বালিশের কভার নিংড়ালে এক গ্লাস রক্ত বেরোত। কিছুদিন পর পা থেকেও রক্তপাত শুরু হয়। হতাশা পুষে রেখেই সুস্মিতার এই দশা হয়ে বলে জানিয়েছেন প্রদীপবাবুর। তিনি বলেন, বিয়ের পর সুস্মিতার প্রথমে ছেলে হয়। ৩৮ দিনের মাথায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ছেলেটির মৃত্যু হয়। এর পরেই পরপর দুই মেয়ে। মনে আশা থাকলেও ছেলে হয়নি। সেই স্বপ্নভঙ্গ থেকে হতাশার জন্ম। ছোট মেয়ে জন্মানোর পর তা আরও বাড়তে থাকে। এতে জন্ম নেয় ‘সাইকোজেনিক পারপিউরা’।

টিটিএন/জেআইএম

Advertisement