পেনশনভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করে (শতভাগ পেনশন উঠিয়ে নিয়ে) অবসরে গেলেও তারা উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ও নববর্ষ ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু একই স্কেলে বেতনভোগী স্ব-শাসিত সংস্থায় গ্রাচ্যুইটিধারী অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তাই গ্রাচ্যুইটিভোগী অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পাশাপশি সরকারি চাকরি করেও এ বৈষম্যে গ্রাচ্যুইটিধারীদের (আনুতোষিকভোগী) মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পেনশনভোগী সরকারি চাকরিজীবীরা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করে (শতভাগ পেনশন উঠিয়ে নিয়ে) অবসরে গেলেও বছরে দুইবার উৎসব ভাতা পেয়ে আসছেন। একইসঙ্গে পেনশন প্রথার নিয়ম অনুযায়ী মাসিক চিকিৎসা ভাতাবাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা এবং জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর গেজেট অনুযায়ী বাংলা নববর্ষ ভাতা পেয়ে আসছেন।
এমনকি যারা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছেন অথচ অবসরের বয়স ১৫ বৎসর অতিবাহিত হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় তাদের জন্য পেনশন পুনঃস্থাপনের প্রজ্ঞাপন ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ তারাও পুরো পেনশন সুবিধা পেয়ে আসছেন।
অপরদিকে প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য দফতর, স্ব-শাসিত সংস্থা ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে গ্রাচ্যুইটিধারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব সুবিধার কিছুই পাচ্ছেন না।
Advertisement
প্রাসঙ্গিক কারণে প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন দফতর, আধা সরকারি ও স্ব-শাসিত সংস্থার এককালীন গ্রাচ্যুইটিধারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এ সুবিধা না পাওয়ায় চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের আক্ষেপ তারাও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং একই জাতীয় বেতন স্কেলভুক্ত। তারপরও দ্বিমুখী আচরণের শিকার তারা।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ও নববর্ষ ভাতা প্রদানের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু ২৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শামস্-ই-আরা বিনতে হুদা স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ বিষয়ে অসম্মতি জ্ঞাপন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামস্-ই-আরা বিনতে হুদা বলেন, এসব সুবিধা শুধু পেনশনভোগী চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) গ্রাচ্যুইটিধারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসব ভাতা প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।
অথচ ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব শ্রেণির সরকারি, আধাসরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর অবসরপ্রাপ্ত কমর্তকর্তা/কর্মচারীরা মাসিক নিট পেনশনের সমপরিমাণ বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদানের বিধান রয়েছে। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরাও শতভাগ পেনশন সমর্পণ না করলে যে পরিমাণ নিট পেনশন প্রাপ্য হতেন একই পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর দুইবার উৎসব ভাতা হিসেবে তারাও পাবেন।
Advertisement
প্রজ্ঞাপনে স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, অনেক স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান পববর্তীতে পেনশনভোগীতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই এখানে এটি উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের ২৪ মার্চের প্রজ্ঞাপনের আলোকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রে (বিটাক) এই আদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তারা নিয়মিত এ সুবিধা পাচ্ছেন। তারা বিএডিসির ন্যায় একই গ্রাচ্যুইটিধারী কর্পোরেশন।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিসিক ও বিটাক এসব সুবিধা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি নেইনি। সম্প্রতি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিসিক ও বিটাককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে মানবিক দিক বিবেচনা করে সম্প্রতি পেনশনভোগীদের ন্যায় এসব সুবিধা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএডিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে বিএডিসি শ্রমিক কর্মচারী লীগের (সিবিএ) সাবেক সভাপতি মো. কুতুব উদ্দিন একটি অবেদন পাঠান। আবেদনে আরও স্বাক্ষর করেন বিএডিসি শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জান মোহাম্মদ, বিএডিসি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুর হোসেন মৃধা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বিএডিসি’র সাধারণ সম্পাদক শাসুল হক প্রমুখ।
এ আবেদনপত্রটির অনুলিপি কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এমইউএইচ/জেডএ/এমএস