খেলাধুলা

সেই সাকিবকে ছাড়া কিউইদের সামনে কী করবে টাইগাররা?

হোক তা টেস্ট, টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে? টিম বাংলাদেশের প্রাণশক্তি আর মূল চালিকাশক্তি কিন্তু একজনই- সাকিব আল হাসান। তার সম্পর্কে হাজারো প্রশংসাসূচক শব্দ উচ্চারণ বিশেষণ প্রয়োগও হয়ত যথার্থ নয়। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে সাকিবের কার্যকরিতা আর অবদান তারচেয়েও বেশী।

Advertisement

কমবেশি সব ক্রিকেটারেরই বিকল্প আছে। ইনজুরি বা অন্য কোনো কারণে কেউ কোন সিরিজ, সফর, টুর্নামেন্ট বা ম্যাচ খেলতে না পারলে তার অভাববোধ হয়। সে ঘাটতি পুরোপুরি না হলেও কিছুটা পূরণও হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দলে পারফরমার সাকিব না থাকা মানেই বড় ধরনের ঘাটতি, শূন্যতা এবং অপুরণীয় ক্ষতি।

সাকিব শুধু বোলার বা ব্যাটসম্যান হলে বিষয়টি ছিল একরকম। তাহলে শুধু বোলার বা ব্যাটসম্যান সাকিবের অভাববোধ হতো। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। সাকিব অলরাউন্ডার। যার বল ও ব্যাট সমান সচল ও কার্যকর। দলে অলরাউন্ডার সাকিবের অবদান সবচেয়ে বেশী।

বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার যার বল ও ব্যাট দুই'ই সমান কার্যকর। সে কারণেই টিম বাংলাদেশ বাঁহাতি স্পিনার মানে বোলার সাকিকের পাশাপাশি উইলোবাজ বা ব্যাটসম্যান সাকিবকে সমান ভাবে চায়। কেন বা চাইবে না?

Advertisement

পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব। যার ব্যাট ও বল সমান ভাবে চলে। একদিকে রান করেন। অন্যদিকে উইকেটও পান। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির মত একদিনের খেলাতেও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফরমার সাকিব।

তাই একবার নয়; বারবার বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব্যসাচি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। কিন্তু এবার সেই সব্যসাচি সাকিবকে ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্ল্যাকক্যাপসদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে টাইগাররা।

আগামীকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে নেপিয়ারে যে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে তার আগে ঘুরে ফিরে সাকিবের কথাই উঠছে বার বার। জাতীয় দলের কোচ স্টিভ রোডসও কিউইদের বিপক্ষে সিরিজে সাকিবকে খুব মিস করছেন।

সাকিবের অভাববোধ হতেই পারে। হবারই কথা। কারণ তার কোন বিকল্প নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা অলরাউন্ডার সাকিবের বিকল্প একজন হতে পারেন না। তার জায়গা নিতে দরকার দুইজন পারফরমার। তাই তো কয়েক বছর আগে জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, সাকিব হচ্ছে ‘টু ইন ওয়ান’। একাই দুজন। আসলেও তাই।

Advertisement

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে এক সাকিবকে রিপ্লেস করতে চাই একজন মেধাবী ও যোগ্য ব্যাটসম্যান আর একজন সেই মানের বাঁহাতি স্পিনার। তা আর মিলবে কই? তাই সাকিবের অভাববোধ হবেই।

পরিসংখ্যান পরিস্কার সাক্ষী দিচ্ছে, ১৯৫ ম্যাচে ৪০টি হাফসেঞ্চুরি আর ৭টি সেঞ্চুরিতে ৫৫৭৭ রান এবং ২৪৭ উইকেট পাওয়া অলরাউন্ডার সাকিব নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। রান সংগ্রহে এক নম্বর আর উইকেট শিকারেও সবার ওপরে।

কিউইদের বিপক্ষে ২১ টি একদিনের খেলায় অংশ নিয়ে সমান দু'টি করে শতরান ও অর্ধশতক উপহার দিয়ে সাকিবের সংগ্রহ ৫৭৫ রান আর উইকেট সংখ্যা ৩৫টি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অবশ্য কিছুটা ম্লান সাকিব; ১১ খেলায় সংগ্রহ ২৩৪, সেঞ্চুরি নেই, সর্বোচ্চ ৫৯।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে হওয়া সর্বশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি রান ৮৪ ((৫৯+৭+১৮), গড় ২৮.০০। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে ১১ খেলায় ১৮ উইকেট, সেরা বোলিং ৪/৩৩, ৪ উইকেট ২ বার। সর্বশেষ সফরে তিন ম্যাচের সিরিজে সাকিবের বোলিং স্পেলগুলো এরকম: ১০-০-৬৯-৩, ১০-০-৪৫-২ আর ৮-০-৫৫-০।

এমন উজ্জ্বল পারফরমেন্স যার, তার অভাববোধ হবেই। তাকে মিস না করার কোনো কারণ নেই। তাই তো সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডসের মুখে সাকিবের জন্য আহাজারি, 'সাকিব না থাকা একটা বড় ধাক্কা। সাকিবের মত পারফরমার আপনি পাবেন কোথায়? দলে সাকিবের মত আর কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।'

নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন, ঠাণ্ডা-কনকনে বাতাস আর ভেজা আবহাওয়া ও অনভ্যস্ত- প্রতিকুল উইকেটে যে কজন হাতে গোনা পারফরমারের খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, সাকিব তাদের অন্যতম। তাই সাকিবের অভাববোধটা আরও হবে বেশী অনুভুত হতে পারে। দেখা যাক সাকিব ছাড়া এবার নিউজিল্যান্ডে কিউইদের সাথে কী করে টাইগাররা?

এআরবি/এসএএস/এমএস