ক্যান্সার শুনলেই একটা আতংক কাজ করে আমাদের সকলের মনে। কারণ ধরেই নেয়া হয় ক্যান্সার মানেই ‘নো এ্যান্সার’। অর্থাৎ নির্ঘাত মৃত্যু।
Advertisement
এ অবধি প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সার আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে এর ধরন, পরিধি এবং ভয়াবহতা সংগত কারণেই আলাদা আলাদা রকম। এ কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের বাঁচার হার, চিকিৎসা এবং জটিলতা নির্ধারিত হয় ক্যান্সারের ধরন এবং ধারণের উপর ভিত্তি করে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়ত পরিণতি হয় নেতিবাচক। তবুও আশায়–ই তো বসতি। বেঁচে থাকার আশা কেন আমরা সহসা ত্যাগ করব?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্যান্সার মানেই কেন নো এ্যান্সার? এর উত্তরে বলতে হয়, ক্যান্সার শরীরের মধ্যে বাসা বাঁধে নীরব ঘাতকের মতো। কারণ শরীরে ক্যান্সার কোষ বেড়ে ওঠে চুপে চুপে। অর্থাৎ শরীরে তেমন কোনো উপসর্গ ছাড়াই।
ফলে অধিকাংশ সময়ই রোগী চিকিৎসকের কাছে ক্যান্সারের শুরুতে আসে না। কারণ যেহেতু শরীর আগের মতোই ঠিকঠাক চলতে থাকে কোনো রকম ঝামেলা বা উপসর্গ ছাড়াই। এ কারণে যখন শেষাবধি রোগী চিকিৎসকের কাছে আসে তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। ততদিনে ক্যান্সার রোগ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আর একবার ছড়িয়ে পড়লে তখন আর তেমন কিছু করার থাকে না।
Advertisement
কিন্তু ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি? সত্যিকার অর্থে বললে এর একক কোনো উত্তর নেই। বরং বলা যা এটা “মাল্টিফেক্টোরাল” বা “বহুমুখী”। যেমন বায়ু, মাটি, পানি এবং খাবার দূষণের মাধ্যমে শরীরে নানা ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান প্রবেশ করে থাকে।
এক সময় হয়ত এ সকল উপাদানই শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী সেল বা কোষ তৈরি করতে শুরু করে। আবার বংশক্রমিক গতিধারাও ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী সেল বা কোষ তৈরি একবার শুরু হলে একসময় সে সকল সেল পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় ক্যান্সার সেল সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগে হয়ত তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। অথবা এমন সব লক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে যা নিয়ে রোগী তেমন উদ্বিগ্ন হয় না। ফলে অল্পস্বল্প শারীরিক উপসর্গ প্রকাশিত হলেও রোগী চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না।
তাহলে করণীয় কি? করণীয় একটাই—সেটা হচ্ছে সচেতনতা। নিজে সচেতন হওয়া। কারণ সচেতন হলে হয়ত ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বছরে অন্তত একবার হলেও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক তা করে ফেলা।
Advertisement
এর সাথে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন,পরিমিত ঘুম, এবং ধূমপান, পান, জর্দা, মদ্যপান পরিহার করা, নিয়মিত ব্যয়াম করা, ফলমুল, শাকসব্জি বেশি বেশি খাওয়া, খাবারে অতিরিক্ত চর্বি, মসলাজাতীয় খাবার বর্জন করলে অনেক সময় হয়ত ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়া বায়ুদূষণ, পানিদূষণ রোধে আমাদের ব্যাপক করণীয় আছে। যেভাবে মলমূত্র, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ পানিতে মিশছে এক কথায় তা ভয়াবহ। এর সাথে ইটভাটা, কলকারখানার ধোঁয়া, ধুলাবালি বাতাসে মিশে বাতাসকে বিষাক্ত করে তুলছে। সার্বিকভাবে পরিবেশগত এই যে বিরূপ প্রভাব সেটাও শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
এক কথায়, ক্যান্সার সেল সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। যদিও আমাদের দেশে কেন এবং কিভাবে ক্যান্সার দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ লাভ করছে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা না হওয়ায় এ ব্যাপারে ধারণাভিত্তিক কথাই তুলে ধরতে হচ্ছে।
পরিশেষে বলব ক্যান্সার হয়ত এক সময় জয় করা সম্ভবপর হবে। শুরুতেই নির্ণয়ও হয়ে যাবে। সে সকল পদ্ধতি আবিষ্কারও হচ্ছে। তখন ভোগান্তিও কমবে। মানুষের বেঁচে থাকার হারও বাড়বে। তবুও সার্বিকভাবে সচেতনতার কিন্তু বিকল্প কিছু নেই।
লেখক : সহয়োগী অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।
এইচআর/এমকেএইচ