জাতীয়

হজে প্রথমবারের মতো চিকিৎসক দলে বিশেষজ্ঞদের অগ্রাধিকার

চলতি বছর আসন্ন হজ মওসুমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হাজিদের চিকিৎসাসেবায় পাঠানো হজ চিকিৎসক দলে মনোরোগসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অগ্রাধিকার পাবেন। মেডিসিন ও জেনারেল প্র্যাকটিশনারদেরকে বিশেষ করে মনোরোগ, বক্ষব্যাধি, ক্লিনিশিয়ান, ডেন্টাল, নাক-কান ও গলা, ইউরোলজিস্ট, এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট ও অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞদের মেডিকেল টিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

Advertisement

পবিত্র হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী করতে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি (সংশোধিত) ১৪৪০/২০১৯ ঘোষণা ও নীতিমালা অনুমোদিত হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও হজ কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে এ বছরের ঘোষিত হজনীতিমালা হাজিবান্ধব হবে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের আলোকে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।

নীতিমালায় যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে হজযাত্রীদের ন্যায় ওমরাহ যাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা, বাংলাদেশি হজযাত্রীর সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মচারী, এজেন্সি, মালিক, মোনাজ্জেম ও অনুমোদিত ব্যক্তিদের জন্য স্টিকার ভিসা বা দীর্ঘমেয়াদি হজ সার্ভিস ভিসা ইস্যু, সৌদি আরবের মিনা, আরাফাত ও মুজদালেফায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, হজ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী আড়াই থেকে তিন হাজার হজযাত্রীর জন্য একজন হিসাবে আনুপাতিক হারে প্রশাসনিক দল পাঠানো ও জেলা প্রশাসকের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে হজ গাইড নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে ইতোপূর্বে হজ করেছেন-এমন ব্যক্তিদের থেকে ৫০ ভাগ গাইড নিয়োগ এবং অবশিষ্ট ৫০ ভাগ গাইড সৌদি আরব থেকে নিয়োগ দেয়া ইত্যাদি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করেন। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী হজ পালন করেন। এবারও সমসংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজে যারা গমন করেন তাদের বেশিরভাগই অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি নিয়ে হজ পালন করতে যান। যাওয়ার আগে মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে গেলেও তারা যে জটিল রোগে ভুগছেন তা গোপন করে যান কিংবা চিকিৎসকরা বয়স্কদের হজ পালনের সুযোগ করে দিতে তথ্য গোপন করেন। সৌদি আরবে কোনো হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টারে ও মুমূর্ষু হলে তাদেরকে সেদেশের বড় বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দেয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটে যখন কোনো জটিল অসুখ নেই লেখা দেখেন এবং বাস্তবে জটিল রোগী দেখতে পান তখন তারা চমকে যান।

গত বছর পবিত্র মক্কায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হজ চিকিৎসক দলের প্রধান বলেন, ‘মক্কার বড় বড় হাসপাতালের চিকিৎসকরা এখন আর বাংলাদেশি রোগীদের ভর্তি করতে চান না। মেডিকেল সার্টিফিকেট আর বাস্তবে জটিল শারীরিক অবস্থা দেখে তারা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন।’ হজ মওসুমে লাখো হাজির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হজ গাইড ও স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ নিজ দেশ ও সৌদি আরবে অবস্থানকারী নাগরিকদের মধ্যে থেকে আনুপাতিক হারে হজ গাইড ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়। মক্কা, মদিনা, আরাফাত, মিনা ও মুজদালিফা যাতায়াতের রাস্তাঘাট পরিচিত, আরবি ভাষা জানা ও বোঝা এবং হজের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবহিত থাকায় তারা হাজিদের সুন্দরভাবে গাইড করতে পারে।

অতীত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এবার জেলা প্রশাসকের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে হজ গাইড নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে ইতোপূর্বে হজ করেছেন-এমন ব্যক্তিদের থেকে ৫০ ভাগ গাইড নিয়োগ এবং অবশিষ্ট ৫০ ভাগ গাইড সৌদি আরব থেকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে মনে করছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতারা।

এমইউ/এসআর/এমকেএইচ

Advertisement