এ যেন অবিশ্বাস্য এক কল্পকাহিনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক স্টেনো টাইপিস্ট (সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর) গত ১০ বছর যাবৎ হাঁকাচ্ছেন পাজেরো গাড়ি! এ গাড়ির চালকের বেতন বাবদ প্রতি মাসে খরচ ৪১ হাজার টাকা। গত ১০ বছরে চালকের বেতন বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া এ সময় তিনি ডিজেল বাবদ খরচ তুলেছেন ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে গাড়িটির পেছনে ১০ লিটার মবিল খরচ করা হয়েছে।
Advertisement
পিডিবির এই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর নাম মো. আলাউদ্দিন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি এ গাড়িটি দখলে রেখেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে তার কাছ থেকে পাজেরো গাড়িটি উদ্ধার করে।
ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে এবং কর্তৃপক্ষকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে গাড়িটি ব্যবহার করছেন- অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) প্রাপ্ত এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার এ অভিযান চালায় দুদক।
দুদক মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে সকালে দুদকের পুলিশ ফোর্স এবং চৌকস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। টিমটি মতিঝিলে অভিযান চালিয়ে গাড়িটি (ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১১-২৮২৭) জব্দ করে। এ সময় গাড়িচালক মো. আবুল হোসেন জনি এবং নিরাপত্তা প্রহরী মো. সামছু মিয়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
অভিযানকালে দুদক টিম জানতে পারে, প্রতি মাসে গাড়িটির জন্য ডিজেল বরাদ্দ হয় ৪৫০ লিটার, যার আর্থিক মূল্য ২৯ হাজার ২৫০ টাকা। এ হারে প্রতি বছর জ্বালানি বাবদ ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ করা হয়।
দুদক টিম আরও জানতে পারে, গাড়িটির লগ বইয়ে আলাউদ্দিন মিয়া স্বাক্ষর করেন না, স্বাক্ষর করেন পিডিবির অন্য একজন কর্মচারী।
অভিযান প্রসঙ্গে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান ও মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে গাড়িটি ২০০৯ সাল থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ব্যবহার করেন। গাড়িটির পেছনে গত ৯ বছরে জ্বালানি তেল, মেরামত এবং গাড়িচালকের বেতন বাবদ সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কোনোভাবেই ফুল টাইম গাড়ি পান না। এ ধরনের আইন অমান্য করা প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ধ্বংস করার শামিল, যা ছোট দুর্নীতি থেকে বড় দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করে। দুদক শিগগিরই এ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে আইনানুগ পথে অগ্রসর হবে।’
Advertisement
এমইউ/আরএস/এমএস