‘চার সন্তান নিয়ে সেনা সদস্যের স্ত্রীর করুণ দশা’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর অসহায় নারী ফজিলা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। সোমবার দুপুরে তিনি তার দপ্তরে নিয়ে এসে ফজিলা বেগমের কষ্টের কথা শোনেন। এ সময় ফজিলা বেগম তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর গত এক যুগের কষ্টের কথা জেলা প্রশাসককে জানান।
Advertisement
ফজিলা বেগম বলেন, তার স্বামী একযুগ ধরে নিখোঁজ। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হিসেবে তার স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেনশনের টাকা জমা হচ্ছে এবং সঞ্চিত রয়েছে। কিন্তু স্বামীর কোনো সন্ধান বা ‘মৃত্যুসনদ’ না থাকায় নমিনি হিসেবে এই টাকা তিনি তুলতে পারছেন না। এ টাকা তুলতে পারলে তার অভাব-অনটন দূর হবে। তিনি সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন। জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তিনিসহ প্রশাসন তার পাশে আছে। আব্দুল হানিফ নিখোঁজের পর ঢাকার কাফরুল থানায় যে জিডি হয়েছিল, তার ফলোআপ আছে কি-না সেটি খোঁজ নেয়া হবে। আব্দুল হানিফের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় তার সন্ধানের কোনো সূত্র আছে কি-না সেটিও খুঁজে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এবং তার সর্বশেষ কর্মস্থলে যোগাযোগ করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। এসবের ভিত্তিতে ফজিলা বেগম যেন নমিনি হিসেবে দ্রুত স্বামীর পেনশনের টাকা পেতে পারেন, সে ব্যাপারে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক ফজিলা বেগমের বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর নেন। তার ছোট মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী সাঈদা হুমায়রা খুশির লেখাপড়া যাতে অব্যাহত থাকে এজন্য পাঁচ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন এবং শীতবস্ত্র উপহার দেন। অর্থাভাবে ফজিলা বেগমের ছোট ছেলে আবু নাঈমের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসক দুঃখপ্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, যশোর শহরের রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন ফজিলা। তার স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ গ্রামের মৃত কাদের মোল্লার ছেলে। সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন।
Advertisement
২০০৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে যাওয়ায় ফজিলা বেগম সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটান। অথচ তার স্বামীর অ্যাকাউন্টে পেনশনের লাখ লাখ টাকা এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ রোববার জাগো নিউজে প্রকাশিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল তাদের খোঁজখবর নেন।
মিলন রহমান/এমএএস/এমএস