চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে খরচ বাড়ল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু’টি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের বিধান রেখে ‘হজ প্যাকেজ, ১৪৪০ হিজরি/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ’ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
Advertisement
এবার হজ পালনে প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
গত হজের তুলনায় প্যাকেজ-১ এ খরচ বেড়েছে ২০ হাজার ৫৭১ টাকা ও প্যাকেজ-২ এ বেড়েছে ১২ হাজার ৬৪১ টাকা।
Advertisement
গত হজে প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা। অন্যদিকে প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে খরচ হয় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা।
একই সঙ্গে সংশোধিত ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ১৪৩৯ (২০১৮)’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১০ আগস্ট (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ২০ হাজার জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
Advertisement
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোও দু’টি প্যাকেজ করতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এজেন্সিগুলো প্যাকেজ-২ এর জন্য নির্ধারিত ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভাড়ার সুবিধার ওপর ভিত্তি করে দু’টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। বাড়ি কাবা শরীফের ৫০০ মিটারের মধ্যে প্যাকেজ-১ আর সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি হচ্ছে প্যাকেজ-২। মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা ট্রেন সুবিধা পাবেন।’
এবার হজের খরচ কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে, কোনো ক্ষেত্রে কমেছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘এবার বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। এই ভাড়া গতবারের চেয়ে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কম। গত বছর বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা।’
এবার বাড়ি ভাড়া একটু বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যে ভাড়া এক লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ টাকা ছিল তা এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা হয়েছে। ১০ হাজার টাকা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের কুরবানির টাকা এবারও ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। কুরবানির টাকা এবার বেড়েছে। আগে ছিল ৪৭৫ রিয়াল এবার হয়েছে ৫২৫ রিয়াল। ৫০ রিয়াল বাড়িয়েছে সৌদি সরকার।’
‘এছাড়া সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রতি হজযাত্রীর জন্য ৫০ সৌদি রিয়াল এবং জেনারেল কার সিন্ডিকেটের অনুকূলে ১৮ রিয়াল বাবদ মোট ৬৮ রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ অর্থাৎ এক হাজার ৫৩০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটা প্রত্যেক হজযাত্রীর গ্যারান্টি। এটা ওখানে এডজাস্টমেন্টের সুযোগ আছে।’
সৌদি সরকারের ট্রেন সুবিধা গ্রহণকারী হাজিদের ২৪ হাজার ৯৮১ টাকা ও অন্যান্য হাজিদের ১৯ হাজার ২৫ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ভাড়া বাবদ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি আরও বলেন, ‘এবার একটা নতুন প্রস্তাব আছে, সৌদি আরব মিনায় তাঁবুতে বহুতল বিশিষ্ট খাটের ব্যবস্থা করবে। যদি এই ব্যবস্থা করা হয় তবে প্রত্যেক হজযাত্রীকে ৪ হাজার ১৬ টাকা বাড়তি দিতে হবে। এখন সেখানে ফ্লোরিং করা হয়। যদিও তারা বহুতল খাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি। এলে দিতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই বছরের হজের অনুসরণীয় বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে এমআরপির পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে।’
এবারও একটি হজ এজেন্সি সর্বনিম্ন ১৫০ জন ও সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। এক ফ্লাইটে তিনটি মোয়াল্লেমের বেশি হজযাত্রী দেয়া যাবে না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
শফিউল আলম আরও বলেন, ‘যে সব ব্যক্তি দু’বার বা এর বেশি হজ করেছেন বা ভিসা পেয়েছিলেন কিন্তু হজে যেতে পারেননি তাদের মধ্যে যারা এ বছর হজে যাবেন তাদের সৌদি সরকারের আরোপ করা ২ হাজার ১০০ রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এটা প্যানাল্টি, ডিসকারেজিং।’
নতুন হজ ও ওমরাহ নীতিতে যা আছেনতুন জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্র্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রচারের জন্য আগে শুধু ওয়েবসাইটে দেয়া হতো। এখন একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি আকারে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশসহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মাধ্যমে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে নিয়ম ছিল ৪৫ জন হজযাত্রীর জন্য একজন গাইড। সৌদি আরবের বাসে সাকুল্যে ৪৫ জন ধরে। একজনও বেশি নেয়া যায় না। তাই এখন ৪৪ জনের জন্য একজন গাইড নির্ধারণ করা হয়েছে।’
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীর সম্মতি ছাড়া তার স্থানে অন্য কাউকে প্রতিস্থাপন করা যাবে না জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা ছাড়া রিপ্লেসমেন্ট হবে না, রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে এবং জীবিত থাকলে সম্মতি লাগবে।’
‘আগে ছিল ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আর্থিক, দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এখন আরেকটু এক্সপ্লেইন করা হয়েছে ওখানে। সেখানে এখন বলা হয়েছে আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান এবং মানসিকভাবে সুস্থ্য ব্যক্তি হজে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি একাধিক এজেন্সি সমন্বিতভাবে হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় তবে এজেন্সিগুলোকে হজ পরিচালকের উপস্থিতিতে পারস্পরিক লিখিত সম্মতির ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রদানকারী এজেন্সি নির্ধারণ করা হবে। কারণ এটা নিয়ে অনেক সময় এজেন্সিগুলোর মধ্যে মনোমালিন্য হয়।’
সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ অফিসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য নতুন নীতিতে বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখানে অনেক লোক লাগে কিন্তু লোক নেই। এজন্য সেখানে সর্বোচ্চ ষষ্ঠ গ্রেডে দু’জন এবং ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে ৫ জন কর্মচারী সাময়িকভাবে সংযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।’
আগের নীতিমালায় রমজান মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত ই-হজের চুক্তিপত্র ঢাকায় পাঠানোর নিয়ম থাকলেও এখন এটা রমজান মাসের আগেই করতে হবে বলেও জানান শফিউল আলম।
‘নীতিতে নতুন একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে যে, প্রবাসী নাগরিকদের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া যাবে। অবৈতনিক এসব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হলে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
নীতিমালা অনুযায়ী হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ক্যাটারিংয়ের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘হজযাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে সহজে হোটেলে পাঠানোর সুবিধার্থে পাসপোর্টের পিছনে বাড়ির ঠিকানার স্টিকার ও বিভিন্ন বাড়ির হজযাত্রী সহজে শনাক্ত করার জন্য লাল, সবুজ, হলুদ, নীল, গোলাপী রংয়ের কাগজ লাগিয়ে দেয়া হবে।’
হজ গাইডের ৫০ ভাগ সৌদি আরব থেকে নিয়োগ দেয়া যাবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় বা হজ পালন করেছেন এমন অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের প্রেষণে মৌসুমী হজ অফিসার নিয়োগ করা হবে।’
নীতি অনুযায়ী বিমানভাড়া বাবদ জমা করা অর্থ সরাসরি এয়ারলাইন্স বরাবর পে-অর্ডার ছাড়া অন্য কোনভাবে দেয়া যাবে না বলেও জানান শফিউল আলম।
তিনি বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে হজযাত্রীদের মতো ওমরাহ যাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। ওমরাহ এজেন্সিকে হজ পরিচালকের কাছে যাত্রী প্রত্যাবর্তন প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যাতে কেউ থেকে না যায়। এ বিষয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
এ সময় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এনএফ/এমকেএইচ