দেশজুড়ে

মাসুম বাড়ি এলো, তবে লাশ হয়ে

মা আর অল্পদিনের মধ্যে ফিরে আসবো। সামনে কোরবানির ঈদ, তাই তো একবারেই আসলেই ভালো হয়।সুমা আর লামিয়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিও। তুমি ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করিও। মোবাইলে মায়ের সঙ্গে এগুলোই শেষ কথা ছিল অর্নিবান মাসুমের। আর কোনো দিনই কথা হবে না ছেলের সঙ্গে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালে বিআরটিসি’র একটি পরিবহন পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় অর্নিবান মাসুম। বুধবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মাদারীপুরের কুনিয়ার বনগ্রামের ছেলে অর্নিবান মাসুমকে। চিরতরে মাটির নিচে চাঁপা পড়লো এক উদীয়মান যুবকের স্বপ্ন। শুধু পরিবারই নয়, গোটা এলাকায় যেন শোকে কাতর হয়ে পড়েছে।অর্নিবান মাসুমের গ্রামের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাত্র ২০ বছরে পা দিয়েছিল সে। এবারই সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ’তে ভর্তি হয়। একই কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে এইচএসসি সাফর্ল্যের সাথে উর্ত্তীণ হয়। এসএসসি পাস করে গ্রামের স্কুল কেডিডিএ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বাবা লুৎফর হাওলাদার পঙ্গুত্ব। দুই-বোনের মধ্যে বড় বোন সুমাকে বিয়ে দিয়েছে বছর দুয়ের আগে। ছোট বোন লামিয়া আক্তার তিন বছর বয়সী। মা আসমা বেগম আর অর্নিবান মাসুম মিলেই সংসারের চালাতো। এই অল্প বয়সেই পড়াশুনার পাশাপাশি হাতে নিয়েছিল সংসারের ঘানি। এতেও দুঃখ ছিল না, একদিন পড়াশুনা করে বড় চাকরি করবে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করবে, এমনটি ছিল অর্নিবান মাসুমের ইচ্ছে।মাসুমের চাচাতো ভাই আছাদ হাওলাদার জানান, মাসুম বিবিএতে ভর্তি হয়ে গত দু’ মাস আগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানিগঞ্জে ফুড প্রডাক্ট ক্যান্ডি কোম্পানিতে এসআর পদে চাকরি নেয়। ছয় থেকে সাত হাজার টাকার বেতনে চাকরি করতে হয়েছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি করে সংসার চালানোই ছিল ওর অদম্য ইচ্ছে। রোজার ঈদে পরিবারের সাথে হাসি-খুশিতে ঈদ করেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালুতে সাইকেল নিয়ে যাতায়াতের সময় বিআরটিসি’র মাওয়াগামী একটি পরিবহন পেছন থেকে ধাক্কা দিলে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়। পরে স্থানীয়রা কেরানীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। চিরতরে হারিয়ে যায় মাসুম। এই কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে আছাদসহ স্থানীয়রা। মাসুমের বাবা লুৎফর হাওলাদার বলেন, আমার একমাত্র আয়ের সম্বল আল্লাহ নিয়ে গেল। এখন আমি কিভাবে বাচুম। কেউ তো আমার সোনার মানিকের মতো আমাকে যত্ন নিবে না। কেউ তো আর আগের মতো আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে না। আমার সোনারপাখিকে যারা হত্যা করলো, আমি তার বিচার চাই। সেই ঘাতক বাসের চালককে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে সরকারকে অনুরোধ করছি।এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, মেধাবী ছাত্র মাসুমের মৃত্যুর কথাটি আমি শুনে খুবই ব্যথিত হয়েছি। যদি ওর পরিবার আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতে চায়, তা হলে অবশ্যই জেলা প্রশাসক হিসেবে সহযোগিতা করবো। এছাড়া ওর পরিবারের যদি কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাও দেখবো। এ কে এম নাসিরুল হক/এমএএস 

Advertisement