আসন্ন হজ মওসুমে হজযাত্রী পরিবহনে সীমিত পরিসরে হলেও থার্ড ক্যারিয়ার (বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনস ছাড়া অন্য এয়ারলাইনস) চালুর সুযোগ চান হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বর্তমানে হজযাত্রীদের কাছ থেকে তিনগুণ বেশি বিমানভাড়া আদায় করা হচ্ছে। থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিমানভাড়া এক লাখ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।
Advertisement
গত হজ মওসুমে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজারেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু পবিত্র হজ পালন করে। মোট হজযাত্রীর শতকরা ৫০ ভাগ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করে।
দুটি বিমানই হজযাত্রী প্রতি এক লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি টাকা ভাড়াবাবদ আদায় করে। আসন্ন হজ মওসুমেও গত বছরের সমসংখ্যক হজযাত্রীর পবিত্র হজ পালনের কথা রয়েছে।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হজসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে ধর্মমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিমানমন্ত্রী আসন্ন হজে বিমানভাড়া ১০ হাজার টাকা কমানোর ঘোষণা দেন।
Advertisement
হাব নেতারা বলছেন, থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিমানভাড়া এক লাখ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স মোট হজযাত্রীর শতকরা ৫০ শতাংশ করে হজযাত্রী পরিবহন করে থাকে। এ দুটি বিমানে হজযাত্রীদের আসা-যাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণ তাদের ইচ্ছেমাফিক করে থাকে। এ কারণে হজযাত্রীদের কম করে হলেও ৩০ থেকে ৪০ দিন সৌদি আরবে অবস্থান করতে হয়। এক্ষেত্রে হজযাত্রীরা চাইলেও অল্প দিনে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দেশে ফিরে আসতে পারে না।
থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে হজযাত্রীরা তাদের ইচ্ছেমতো দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাবেন ও অপেক্ষাকৃত কম খরচে হজ পালন করার সুযোগ পাবেন বলে তারা মন্তব্য করেন।
হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতি তিন দশকেরও বেশি সময় যাবত হজ ও ওমরাহ হজের সঙ্গে জড়িত। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত হজযাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার চালু ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, হজ মওসুমে বিমান ডেডিকেটেড ফ্লাইট (সরাসরি হজযাত্রী সৌদি আরব নিয়ে যায় এবং খালি ফ্লাইট ফিরে আসে) পরিচালনা করে। অন্য সময়ে সাধারণত (ঢাকা-জেদ্দা, জেদ্দা-ঢাকা) বিমানভাড়া ভাড়া ৪০ হাজার টাকা। সে হিসাবে বিমান দ্বিগুণ ভাড়া অর্থাৎ ৮০ হাজার টাকা ভাড়ায় হজযাত্রী পরিবহন করতে পারে।
Advertisement
আসন্ন হজ মওসুমে সীমিত পরিসরে হলেও তিনি থার্ড ক্যারিয়ারে হজযাত্রী পরিবহন করার দাবি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সৌদি সরকারের শর্তানুসারে মোট হজযাত্রীর শতকরা ৫০ ভাগ সৌদি এয়ারলাইন্সে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশিষ্ট ৫০ ভাগ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবহন করে। হজ মওসুমে হজযাত্রী পরিবহন বিমানের আয়ের একটি বড় উৎস বলে জানান তিনি।
থার্ড ক্যারিয়ার চালু করার ক্ষেত্রে সমস্যা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, হজ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। অতীতে থার্ড ক্যারিয়ার থাকার সুফলের চেয়ে কুফলই ছিল বেশি।
থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে ফ্লাইট বিলম্বে নির্দিষ্ট সময়ে সৌদি আরবে না পৌঁছানো ও টিকিট জালিয়াতিসহ নানাভাবে প্রতারণার শিকার হতে পারে হজযাত্রী। এর দায় সম্পূর্ণ সরকারের ওপর বর্তাবে বিধায় সরকার এ ঝুঁকি নিতে চায় না। এ কারণে সরকার থার্ড ক্যারিয়ার চালুর বিপক্ষে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
এমইউ/বিএ/আরআইপি