ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শনিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান তিনি।
Advertisement
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশের মাঠ থেকে বাণিজ্য মেলা সরিয়ে নেয়ার জন্য ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স’ (বিসিএফইসি) নামের চীনের সহায়তায় ৭৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালীর বাগরাইয়াটেকের (পূর্বাচল) ২০ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, চীন সরকার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘চাইনিজ স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে।
শত কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সম্প্রতি দায়িত্ব নেয়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলছেন, বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে হবে না।
এই প্রকল্পটি নেয়া হয় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সময়। আজকের বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ।
Advertisement
আরও পড়ুন >> দর্শনার্থী অর্ধকোটি, ২০০ কোটি টাকার বিদেশি অর্ডার
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ বিষয়ে বলেন, ‘এই জায়গা (রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশ) অপ্রতুল আমাদের জন্য। অনেকের ধারণা, আমরা পূর্বাচলের দিকে যেটা করছি, সেটা এ রকম বাণিজ্য মেলা হবে কি-না। সেটা সম্ভবত হবে না। এখানে ৩৬ একরের ওপরে আমাদের জায়গা, তারপরও সংকুলান হয় না। ওখানে জায়গা আরও কম। সম্ভবত ওখানে যারা চিন্তা করেছিলেন আমাদের পূর্বসূরি বা এখনও, ওখানে (পূর্বাচলে) সারা বছর ধরেই বিভিন্ন এক্সপোর্ট, মেলা বা শো, বিভিন্ন অর্গানে ফুড প্রডাকশন নিয়ে আসবে। বাইরের ওরাও (বিদেশিরা) আসতে পারে। এসে আমাদের এখানে ওই ধরনের এক্সপোর্ট ফেয়ার করতে পারবে। এই ধরনের বাণিজ্য মেলা ওখানে করা যাবে না।’
টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এখনই এই জায়গা অপ্রতুল। তাহলে ১০ থেকে ২০ বছর পরে কোথায় হবে বাণিজ্য মেলা। সেটাও কিন্তু এখনই চিন্তা করার সময় এসেছে। আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন, আপনারা কিন্তু এই ব্যাপারটা দেখবেন। আমি জানতে চেষ্টা করব, কী করা যায় সামনের দিনগুলোতে।’
সম্প্রতি চামড়া রফতানি কমেছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি আগাতে চাই, তাহলে আমাদের রফতানি বাড়াতেই হবে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গার্মেন্টের ওপর নির্ভর না করে আরও অন্যান্য প্রোডাকশনে যাওয়া উচিত। আমাদের কিন্তু সম্প্রতি র’লেদার এক্সপোর্ট কমে গেছে। যার জন্য কিছু সমস্যাও আছে। আবার কিছু পণ্যের রফতানি বাড়াতে হবে।’
Advertisement
আরও পড়ুন >> বাণিজ্য মেলায় পুরস্কার পেল ৪২ প্রতিষ্ঠান
এদিকে এ মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদেশের প্রায় ২০০ কোটি টাকার রফতানি অর্ডার পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়া মেলায় মানুষের উপস্থিতি অর্ধ কোটি পার হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ মেলায় মানুষের উপস্থিতি প্রায় অর্ধ কোটি পার হয়েছে। আর বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। আর বিদেশের রফতানি অর্ডারও পেয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। তো সব বিবেচনাতেই যা খবর, তাতে আমরা দেখেছি যে, এবারের মেলাটা খুব সফল হয়েছে। এটা পরম্পরা। আগে থেকে ভালো হতে হতে এটা বাড়ছে।’
আরও পড়ুন >> প্রকল্প শেষেও ‘আন্তর্জাতিক’ মানের হচ্ছে না বাণিজ্য মেলা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব এস এম রেজওয়ান হোসেন এবং মেলার আয়োজক সংস্থার প্রধান হিসেবে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস-চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছে। ২৪তম বাণিজ্য মেলার সমাপন হলো আজ।
পিডি/বিএ/জেআইএম