সবুজ-লাবু’র রহস্যজনক নিখোঁজের জট অবশেষে খুলতে শুরু করেছে। র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ করেই বাড়ি ফিরে আসেন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু। তবে একই সাথে র্যাবের হাতে আটক হওয়া কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সন্ধান এখনো মেলেনি। এদিকে সবুজ-লাবুর সন্ধান চেয়ে কুষ্টিয়ায় সবুজের স্ত্রী জিনিয়ার পিটিশনের বিষয়ে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে লাবু-সবুজকে তারা গ্রেফতার করেনি। র্যাব বা অন্য কোনো সংস্থা তাদেরকে গ্রেফতার বা আটক করেছে কিনা এমন তথ্যও তাদের কাছে নেই। হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় গ্রেফতারের জন্য তারা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে খুঁজছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত শুক্রবার ভোররাতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট থেকে র্যাব সদস্যরা লাবু ও সবুজকে আটক করে নিয়ে যায়। লাবু-সবুজকে আটকের আগে র্যাব সদস্যরা ওই রিসোর্টের মালিক মনিরুজ্জামান মনিরকেও তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে। অবশ্য ওই দিন রাত ১১ টার দিকে মনিরকে ছেড়ে দেয় র্যাব। লাবু এবং সবুজ ”র্যাবের হাতে আটক’ হওয়ার বিষয়টি সবাই নিশ্চিত বলে দাবি করলেও র্যাব সদস্যরা দাবি করেছিলেন তারা লাবু এবং সবুজ নামের এমন কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের কমান্ডার মেজর মোসাদ্দেক ইবনে মুজিব সাংবাদিকদের জানান, তারা কিংবা র্যাবের কোনো ইউনিট লাবু-সবুজকে আটক করেছে এমন কোনো তথ্য তাদের জানা নেই। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেনি। আর র্যাব সদস্যরা তাদেরকে আটক বা গ্রেফতার করেছে কিনা এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। গত কয়েক দিন ধরে সবুজ-লাবু র্যাবের হাত আটক হওয়ার খবরটি রীতিমত টক অব দ্যা ক্যান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকসহ প্রশাসনের অনেকের কাছেই ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পদে আসীন এই দুই নেতার খবর জানতে চাচ্ছেন সবাই। সবার একটাই প্রশ্ন র্যাব বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি সত্যিই তাদেরকে আটক করে না থাকে তাহলে সবুজ-লাবু গেল কোথাই ? শুক্রবার রাতেই র্যাব সদস্যরা গাজীপুরের ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট সেন্টারের মালিক মনিরুজ্জামান মানিরকে ছেড়ে দিলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, র্যাব সদস্যরা আটকের পর তার এবং লাবু-সবুজের চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। সকাল ৮ টা পর্যন্ত তাদের তিন জনকেই এক সাথে রাখা হয়। এর পর লাবু-সবুজকে আলাদা জায়গায় রাখা হয়। রাত ১১টার সময় তাকে ছেড়ে দেয় র্যাব। এক সাথে থাকাকালীন সময় পর্যন্ত র্যাব সদস্যরা তাদের সাথে কোনো অসাধাচরণ করেনি বলেও তিনি দাবি করেন। রিসোর্ট মালিক মনিরকে ছেড়ে দেওয়ার পর লাবু-সবুজ র্যাবের হাতে আটকের বিষয়টি আরো জোরালো হয়ে ওঠে। কিন্তু লাবু-সবুজকে আটকের বিষয়টি র্যাবের পক্ষ থেকে স্বীকার না করায় এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গুঞ্জন যখন চরমে ঠিক সেই মুহূর্তে মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার আবুল মহম্মদ সড়কের নিজ বাড়িতে এসে উপস্থিত হন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু। রাতে সাংবাদিকরা লাবু’র বাড়ি ফিরে আসার বিষয়ে জানতে পারলে ছুটে যান লাবুর বাড়িতে। লাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো কিছু না জানালেও লাবুর ভাই ওয়াহেদুজ্জামান লাইজু সাংবাদিকদের জানান, এখনো ফিরে আসেনি, তবে ফিরে আসার পথে। লাবুর ফিরে আসার বিষয় নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, লাবু বাড়ি ফিরে এসেছে এ খবরটি তিনিও শুনেছেন। তবে লাবুর সাথে তার কোনো কথা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকায় বাড়ি এমন কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা মঙ্গলবার বিকেলে লাবুকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখেছেন। সূত্র মতে, সাংবাদিকরা লাবুর বাড়িতে ভিড় জমানোর কারণেই লাবু এবং তার স্ত্রীকে রাতেই অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরিবারটি কোনো অবস্থাতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। এখনো অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। নতুন করে কোনো বিপদে যেন পড়তে না হয় এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি। তবে লাবু এবং মনিরের সন্ধান পাওয়া গেলেও কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সন্ধান এখনো মেলেনি। তিনি জীবিত রয়েছেন নাকি চলে গেছেন না ফেরার দেশে ? এ প্রশ্নের কোনো জবাব মিলছে না। সবুজ-লাবুর সন্ধান দাবিতে রোববার সবুজের স্ত্রী জিনিয়া কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এ পিটিশন দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মডেল থানার ওসিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে লাবু-সবুজকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। র্যাব বা অন্য কোনো সংস্থা তাদেরকে গ্রেফতার বা আটক করেছে কিনা এমন তথ্যও পুলিশের কাছে নেই। হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় গ্রেফতারের জন্য তারা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে খুঁজছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান পিটিশনার জিনিয়ার আইনজীবী জহুরুল ইসলাম। পর্ণোগ্রাফির ঘটনায় বহিষ্কৃত কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় থাকার পর হঠাৎ করেই ১৫ আগস্ট তার সমর্থকদের নিয়ে শোক দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মোমিজ গ্রুপের সাথে ওই দিন সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের সময় মোমিজের শর্টগান নিয়ে পুলিশের সামনেই গুলি ছুড়তে দেখা যায় মোমিজের বেয়াই মাদক আত্মসাতের দায়ে বহিষ্কৃত ঢাকার কাফরুল থানার সাবেক এএসআই আনিসুর রহমান আনিসকে। সংঘর্ষ চলাকালে সবুজ হোসেন নামে মোমিজের এক কর্মী ছুরিকাঘাতে নিহতসহ ২ জন আহত হন। মোমিজের কর্মী সবুজ হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় পরের দিন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সবুজের বড় ভাই আরিফ হোসেন। এ হত্যা মামলায় একই সাথে সবুজের ছোট ভাই আরিফুর রহমান আরিফ ও মামা দুলালকেও আসামি করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবুজের সাথে মোমিজের বিরোধ চলে আসছে। আল-মামুন সাগর/এমএএস/এমএস
Advertisement