প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো উপজেলারই নির্বাচন হচ্ছে না। তবে নির্বাচন না হলেও আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে জেলার সবগুলো উপজেলায়। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো তৎপরতা না থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন।
Advertisement
ইতোমধ্যে তৃণমূল নেতাদের ভোটের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তিনজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে নবীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হাবিবুর রহমান স্টিফেনকে নিয়ে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিতর্কিত এই মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলীয় মনোনয়নের জন্য তিনজন প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের কাঁধে তুলে দেন নেতাকর্মীরা। পরে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান স্টিফেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহরিয়ার বাদলের নাম দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন সাংসদ এবাদুল করিম।
সাংসদের কার্যালয় থেকে ওই প্রার্থীদের ফোন করে তাদের জীবনবৃত্তান্তসহ সকল কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে সাংসদ এবাদুল করিম দলের একক প্রার্থী হিসেবে হাবিবুর রহমান স্টিফেনের নাম কেন্দ্রে পাঠাতে বলেন।
Advertisement
নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান স্টিফেন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও সেটি নিয়ে বিতর্ক অনেকদিনের। ইতোপূর্বে ‘বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা’ হাবিবুর রহমান স্টিফেনের নাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য বীরগাঁও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সামছুল আলম।
বীরগাঁও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উপদেষ্টা মো. সামছুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমি চাকরির কারণে এলাকায় কম যেতাম। পরে জানতে পেরেছি সে (হাবিবুর রহমান স্টিফেন) তালিকায় আছে। এটা নিয়ে আমি সব মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে মিটিং করেছি। পরে হাবিবুর রহমান স্টিফেনসহ ৮ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে তাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের কাছে আবেদন করেছি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছিল ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
এদিকে বিতর্কিত এই আওয়ামী লীগ নেতাকে একক প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আবার এমপি একক প্রার্থী হিসেবে তাকে চূড়ান্ত করায় সরাসরি কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেন না। এর ফলে বিষয়টি নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে তাদের।
দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল জাগো নিউজকে বলেন, এমপি সাহেব সরাসরি বলেছেন তিনি হাবিব সাহেবকে চান। স্বাভাবিক কারণে এমপি সাহেব যখন কিছু চান তখন সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হয়তো ওনার উপর দিয়ে কোনো কথা বলা বা কারো পক্ষে বলবেন না। ওনার (হাবিবুর রহমান) মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র আছে কিন্তু সবাই বলেন তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তাকে নিয়ে এলাকায় বিতর্ক রয়েছে। তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী বাকিদের মধ্যে থেকে একজনে দিলে ভালো হতো।
Advertisement
নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্ধিত সভায় তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু ভোট না হয়ে সবাই মিলে এমপির কাছে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রার্থী চূড়ান্ত করার। এমপির কথার বাইরে যাওয়ার আমাদের কোনো উপায় নেই। উনি যাকে দিয়েছেন তাকেই আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে উনি (হাবিবুর রহমান) বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকেন। তার থেকেও ভালো প্রার্থী ছিল।
কাইতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শুনেছিলাম তিনজন প্রার্থীর নাম দেয়া হবে। আমরা সবাই মিলে এমপি সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম ভালো প্রার্থী দেয়ার জন্য। এখন দেখছি সবাই তাকে (হাবিবুর রহমান) নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাকে বাদ দিয়ে একজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য এবাদুল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ হালিম জাগো নিউজকে বলেন, হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করেন। ওনাকে নিয়ে বিতর্কের তো কোনো কারণ দেখছি না। তকে নিয়ে আমাদের কাছে তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। ক্ষোভ থাকলে তো আমাদের কাছে প্রতিবাদ জানাতেন। যেহেতু হাবিবুর রহমান রাজাকার বা জামায়াতের লোক নন তাই নৌকা প্রতীক পেলে অমুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধা কোনো ব্যাপার না বলে জানান তিনি।
আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস