খেলাধুলা

আবার আলোচনায় হকির নির্বাচন

হকি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার বিচারে ফুটবল ও ক্রিকেটের পর। তৃতীয় বৃহত্তম এই ফেডারেশনটিকে অনেকে বলেন ‘আজব জায়গা’। অনেক ছোট ফেডারেশনে যে শৃঙ্খলা আছে হকিতে তা নেই। এখানে খেলার চেয়ে রাজনীতি বেশি। হকির উন্নয়নের চেয়ে চেয়ার নিয়ে হয় বেশি টানাটানি। কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের যাতাকলে পড়ে দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় এ খেলাটি। মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের মতো নিজস্ব একটা ভেন্যু থাকতেও হকি হাবুডুবু খাচ্ছে অনিশ্চয়তার সাগরে।

Advertisement

খেলা থাকলে হকি যতটা আলোচনায় আসে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয় নির্বাচন আসলে। হকিতে নির্বাচনই যেন সব। অথচ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এ ফেডারেশনে নির্বাচিত কমিটি নেই এক বছর ধরে। সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই। তার প্রায় ৬ মাস পর গত বছর ১১ জানুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মেয়াদ শেষ হওয়া কমিটি বিলুপ্ত করে গঠন করে অ্যাডহক কমিটি। সেই অনির্বাচিত কমিটি দিয়েই হকি চলছে জোড়াতালি দিয়ে।

বাংলাদেশের হকি কিভাবে চলছে তা বোঝার জন্য একটা উদাহরণই যথেষ্ঠ। সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগের খেলা, চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল ঘোষণা এবং তাদের পুরস্কার দিতে লেগে গেছে ৮ মাস। সেখানেও ফেডারেশনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান ট্রফি নিতেই যায়নি। যায়নি শীর্ষ স্থানীয় আরো দুটি ক্লাব।

আগের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েও রহস্যজনকভাবে তা বন্ধ করে দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ২০১৭ সালে ২৭ আগস্ট হওয়ার কথা ছিল হকির ভোট। নির্বাচনের জন্য ২০০০ টাকা করে ১১১ টি মনোনয়নপত্র বিক্রিও করেছিল এনএসসি। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমার আগে ১৬ আগস্ট ২০১৭ নির্বাচন স্থগিত করে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কারণ হিসেবে সামনে এনেছিল দেশব্যাপী বন্যা। তবে আসল কারণ ছিল অন্য।

Advertisement

নির্বাচন স্থগিত করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বলা হয়েছিল এশিয়া কাপের পর (১১ থেকে ২২ অক্টোবর ২০১৭) নির্বাচন হবে। আগের ঘোষিত তফসিলে নির্বাচন যেখানে স্থগিত হয়েছে সেখান থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল। অর্থাৎ মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে। কিন্তু স্থগিত নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় বাতিল। আগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেককে ওই পদে রেখেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটি করে। তারপর থেকেই অনির্বাচিত কমিটি চলছে তো চলছেই।

অ্যাডহক কমিটির বয়স ১৩ মাস পর হওয়ার পর নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। দেশের খেলাধুলার অভিভাবক সংস্থাটি হকি ফেডারেশনের নির্বাচনের জন্য গত ২১ জানুয়ারি ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠণ করে এবং ২৪ জানুয়ারি ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে কাউন্সিলর (ভোটার) হালনাগাদ তালিকা পাঠাতে বলে। ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল কাউন্সিলর তালিকা পাঠানোর শেষ দিন। ফেডারেশন সেভাবেই তাদের অধিভূক্ত ক্লাব ও সংস্থাকে চিঠি দিয়ে কাউন্সিলর তালিকা চায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নাম পাঠায়নি অনেকে।

‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিছু ক্লাব ও সংস্থা তাদের কাউন্সিলরের নাম জমা দেয়নি। যে কারণে আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছি। আশা করি তার আগেই সব কাউন্সিলরের নাম পেয়ে যাবো এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে জমা দেবো’-জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক।

হকি ফেডারেশনের কাউন্সিলর ৮৫ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪১ টি জেলা। এর পর ৩১ ক্লাব। বিকেএসপি, সার্ভিসেস সংস্থা, মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও শিক্ষাবোর্ড মিলে ৭, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত ৫ এবং ১ জন করে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা আম্পায়ার্স বোডের কাউন্সিলর হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকেন।

Advertisement

২০১৭ সালে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন কমিটির দুই সহসভাপতি খাজা রহমত উল্লাহ ও আবদুর রশিদ শিকদার। রশিদ শিকদারের পাল্লা ভারী ছিল বলেই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল বলে হকি অঙ্গনের অনেকের অভিযোগ। এর মধ্যে এশিয়া কাপের পর হঠাৎ মারা যান খাজা রহমত উল্লাহ।

এবারের নির্বাচনে অবশ্য রশিদ শিকদার সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন না বলেই শোনা যাচ্ছে। হকি ফেডারেশনের ভোটের রাজনীতিতে আবাহনীর জোট বেশ শক্তিশালী। বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেককে এ পদে রেখেই ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারে আবাহনী জোট। আবদুস সাদেক নির্বাচন করলে তার প্রতিদ্ব›িদ্ব হতে পারেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মোমিনুল হক সাঈদ। তিনি আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি ও মেরিনার ইয়ার্স ক্লাবের হকি কর্মকর্তা।

আবাহনী জোটের সঙ্গে মোমিনুল হক সাঈদের ভোটের লড়াই কেমন জমজমাট হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে মোহামেডান জোটের উপর। সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে ঝামেলা হয়েছিল মোহামেডান ও মেরিনার্সের মধ্যেই। দুই দলের ম্যাচে গন্ডগোল হওয়াতেই জুনের লিগের ভাগ্য নির্ধারণ হয় ৬ মাস পর। আসন্ন নির্বাচনে মোহামেডান তাদের মিত্রদের নিয়ে কোন দিকে যায় তার উপরও নির্ভর করে নির্বাচনের গতিপথ।

ক্রীড়াঙ্গনে আগের মতো মোহামেডান-আবাহনী দাকুমড়া সম্পর্ক নেই। যে কারণে হকি অঙ্গন এখন তাকিয়ে দেশের দুই বড় ও জনপ্রিয় ক্লাবের ‘কূটনৈতিক’ অবস্থানের দিকে। নির্বাচনে যদি দুই ক্লাবের বৈরীতা থাকে তাহলে হকি ফেডারেশনের ভোটের লড়াই জমবে বলেই মনে করেন অনেকে। যদিও নির্বাচনের তারিখ পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন। ফেডারেশন থেকে কাউন্সিলরের হালনাগাদ তালিকা পেলেই তফসিল ঘোষণা করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ধরে নেয়া যাচ্ছে সব কিছু ঠিক থাকলে মার্চেই হবে এ ফেডারেশনের নির্বাচন। যে সময়েই হোক-জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নড়েচড়ে বসায় ক্রীড়াঙ্গনে আবার আলোচনায় এসেছে হকির নির্বাচন।

আরআই/এসএএস/এমএস