খেলাধুলা

বিপিএল চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

এই না হলে ফাইনাল! মিরপুরের শেরে বাংলা যেন বিনোদনের পসরা সাজিয়ে বসেছিল। মাঠভরা দর্শক হলো, রান হলো, রূদ্ধশ্বাস লড়াইও হলো। যে লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসল ইমরুল কায়েসের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

Advertisement

উত্তেজনাপূর্ণ এক ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে বিপিএলে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এর আগে ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসরের শিরোপা জিতেছিল দলটি।

অনেকটা সময় ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দুলেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১৯৯ রানের পুঁজি দেখে মনে হচ্ছিল, ঢাকা ডায়নামাইটসের রক্ষা নেই আর। এরপর ঢাকা ব্যাটিংয়ে আসার পর একটা সময় মনে হলো, তারাই ম্যাচ জিতবে।

সেখান থেকে আবারও পাশার দান উল্টে দিল কুমিল্লা। দারুণ বোলিংয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসকে আটকে দিল। শেষ পর্যন্ত লড়াই করলেও শেষ রক্ষা হলো না ঢাকার। ৯ উইকেটে ১৮২ রানে থামে সাকিব আল হাসানের দল।

Advertisement

২০০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট ঢাকার। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সুনিল নারিন (০) ফিরে যান রানআউট হয়ে। এরপর উপুল থারাঙ্গা আর রনি তালুকদারের ৫২ বলে ১০২ রানের ভয়ংকর এক জুটি। মনে হচ্ছিল এই জুটিতেই ম্যাচটা হাতে চলে আসবে ঢাকার।

কিন্তু তেমন হলো না। ২৭ বলে ৪৮ রান করা থারাঙ্গাকে ফিরিয়ে জুটিটি ভাঙেন থিসারা পেরেরা। এরপরই ছন্দপতন ঢাকার। ওয়াহাব রিয়াজের শিকার হয়ে সাকিব আল হাসান ফিরে যান মাত্র ৩ রানে। পরের ওভারেই রানআউটের কবলে পড়েন ২৬ বলে ফিফটি করা রনি তালুকদার। ৩৮ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় তিনি খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস।

এরপর হতাশ করেছেন দুই ক্যারিবীয় আন্দ্রে রাসেল আর কাইরন পোলার্ড। রাসেল ৩ বলে ৪ আর পোলার্ড ১৫ বল খেলে মাত্র ১৩ করে আউট হন। ম্যাচটা আসলে ঢাকার হাত থেকে ছুটে গেছে তখনই। পরের ব্যাটসম্যানরা আর জয় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেননি দলকে।

এর আগে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শুরুটা যেমন হয়েছিল, কেউ ধারণাও করতে পারেননি এই দলটিই দুইশ ছুুঁইছুঁই পুঁজি গড়ে ফেলবে। ৭ ওভার শেষে কুমিল্লার রান ছিল ১ উইকেটে ৪৪। অষ্টম ওভারে এসে কাজী অনিক দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তামিম ইকবালকে প্রায় আউটই করে ফেলেছিলেন। উইকেটরক্ষক সোহান একটুর জন্য ক্যাচটি ধরতে পারেননি।

Advertisement

পরের ওভারে আরেকটি সুযোগ দিয়েছিলেন তামিম। রুবেল হোসেনের বলে আন্দ্রে রাসেল ক্যাচ নিলে সেটা মাটিতে লেগে যায়। এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন জাতীয় দলের এই তারকা ওপেনার। সেই যে তাণ্ডব শুরু, চলেছে একদম ইনিংসের শেষ পর্যন্ত।

৬১ বলে হার না মানা ১৪১ রান! ভাবা যায়, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটা কোনো ব্যাটসম্যানের ইনিংস। তামিম এই অতিমানবীয় ইনিংসটা খেললেন। তাতেই ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ১৯৯ রানের পাহাড় গড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

অথচ টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো ছিল না কুমিল্লার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মারকুটে এভিন লুইসকে (৬) এলবিডব্লিউ করেন রুবেল হোসেন। কুমিল্লার তখন রান মাত্র ৯।

দ্বিতীয় উইকেটে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন তামিম আর এনামুল বিজয়। দেখেশুনে খেলে ৮৯ রানের জুটি গড়েন তারা। বিজয় ৩০ বল খেলে ২৪ রান করে এলবির ফাঁদে পড়েন সাকিবের বলে। ওই ওভারেই শূন্যতে রানআউট হয়ে যান শামসুর রহমান শুভ।

পরের সময়টা শুধুই তামিমের। ইমরুল কায়েস (২১ বলে অপরাজিত ১৭) যা একটু সঙ্গ দিয়েছেন। ৩১ বলে ফিফটি তুলে নেন তামিম। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পরের ১৯ বলেই। শেষ পর্যন্ত তামিম ৬১ বলে ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। যে ইনিংসে চারের চেয়ে ছক্কা ছিল বেশি। ১০টি বাউন্ডারির সঙ্গে তামিম হাঁকান ১১টি ছক্কা।

এমএমআর/এমআরএম