অর্থনীতি

ব্লেজারে ‘রাজকীয় অফার’

শুরু থেকেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ‘ফাটাফাটি’ ও ‘গোল্ডেন’ অফার দিয়ে আসছে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়া ব্লেজার বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো। এই দুই অফারের পাশাপাশি মেলার শেষ সময়ে এসে কিছু প্রতিষ্ঠান ‘রাজকীয়’ অফার দেয়া শুরু করেছে।

Advertisement

এই অফারের আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে ব্লেজার বিক্রি করছে। পাশাপাশি তারা ‘ফাটাফাটি’ ও ‘গোল্ডেন’ অফারও চালু রেখেছে। এ অফার দুটির আওতায় প্রতি পিস ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৮০০ টাকায়।

মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাণিজ্য মেলায় অফারের আওতায় থাকা ব্লেজারই সর্বাধিক বিক্রি হয়। এজন্য এবার মেলার প্রথম থেকেই বিভিন্ন স্টল ‘ফাটাফাটি’ ও ‘গোল্ডেন’ অফার দেয়া শুরু করে। তবে মেলার প্রথম ২০ দিন ব্লেজার বিক্রির পরিমাণ তুলনামূলক কম ছিল। এ কারণে ‘ফাটাফাটি’ ও ‘গোল্ডেন’ অফারের পাশাপাশি ‘রাজকীয় অফার’ চালু করা হয়েছে। এই অফার চালুর পর বিক্রি আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।

এই তিন ধরনের অফারের বাইরেও বিভিন্ন দামের ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে মেলায়। বিভিন্ন রঙ ও সাইজের এসব ব্লেজার চার হাজার টাকার মধ্যেই কেনা যাচ্ছে। প্রতিটি ব্লেজারে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেয়া হচ্ছে বলে দাবি বিক্রয়কর্মীদের।

Advertisement

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বেশ কয়েকটি ব্লেজার ও স্যুট বিক্রির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই অপরিচিত ব্র্যান্ডের। রাজধানীর নীলক্ষেত, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, ভাসানটেক, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠান মেলায় ব্লেজারের পসরা সাজিয়েছে।

মেলায় ব্লেজার বিক্রিতে ‘রাজকীয় অফার’ চালু করা স্টল আশরাফ অ্যান্ড ব্রাদার্স। এই স্টলের বিক্রয়কর্মী মো. জামাল বলেন, আমরা মেলার শুরু থেকেই গোল্ডেন অফার দিচ্ছি। এই অফারের আওতায় একটি ব্লেজারের দাম রাখা হচ্ছে ১৫০০ টাকা। তবে মেলার প্রথম ২০ দিন বিক্রির পরিমাণ খুব একটা ভালো ছিল না। তাই নতুন করে রাজকীয় অফার চালু হয়েছে।

“গোল্ডেন অফারের আওতায় থাকা কিছু ব্লেজার রাজকীয় অফারের আওতায় এনে ১২শ’ ও ১৩শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অফার চালুর পর আমরা ক্রেতাদের ভালোই সাড়া পেয়েছি।”

এদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিমত, বর্তমানে পোশাক হিসেবে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ দখল করে নিয়েছে ব্লেজার। শীত বা গ্রীষ্ম সব ঋতুতে ব্লেজারের চাহিদা রয়েছে। তবে শীতে স্টাইলিশ হিসেবে ব্লেজারের কদর তুলনামূলক একটু বেশি। পুরুষ ক্রেতাদের পাশাপাশি নারী ক্রেতারাও ফরমাল পোশাক হিসেবে স্যুট ও ব্লেজারের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগ্রহী ক্রেতাদের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বাণিজ্য মেলায় বাহারি স্যুট, কোট-ব্লেজার নিয়ে এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

ফরহাদ হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, ব্লেজার এখন শুধু শীত নিবারণের জন্য মানুষ গায়ে দেয় না। এটা আকর্ষণীয় ফ্যাশনের একটি অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ সবাই এখন ব্লেজার ব্যবহার করছেন। এখন কোনো পার্টিতে ব্লেজার ছাড়া গেলে বেমানান দেখায়। তাই মেলায় এসেছি। পছন্দের দুটি ব্লেজার কিনব। কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেব কোন স্টল থেকে কোন ব্লেজার কিনব।

মেলায় রাজকীয় অফারের আওতায় থাকা ব্লেজার নেড়েচেড়ে দেখা ফাতিমা নামের একজন বলেন, ওদিকে কয়েকটি স্টলে গোল্ডেন ও ফাটাফাটি অফার দেখলাম। এখানে এসে দেখি এরা রাজকীয় অফার দিচ্ছে। ছেলের জন্য একটি ব্লেজার কিনব। তাই একটু যাচাই করে দেখছি। গোল্ডেন, ফাটাফাটি বা রাজকীয় যাই বলেন আমার কাছে মনে হচ্ছে অফারের আওতায় থাকা ব্লেজারগুলোর মান প্রায় একই রকম।

মেলায় ‘ফাটাফাটি’ অফার দিয়ে ১৩শ’ টাকায় ব্লেজার বিক্রি করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান আশিক ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল বলেন, আমাদের স্টলে ১৩শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন মানের ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে। আছে মোদি কোট এবং বিভিন্ন রকম কটি। আমাদের সব পণ্যের মান খুব ভালো।

তিনি বলেন, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি ক্রেতারা অফারের আওতায় থাকা ব্লেজারই বেশি কেনেন। এ কারণে প্রথম দিন থেকেই আমরা ১৩শ’ ও ১৮শ’ টাকার ফাটাফাটি অফার দেয়া শুরু করেছি। মেলায় ১৩শ’ টাকায় যেসব ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে, অন্যত্র এর দাম দুই হাজার টাকার নিচে হবে না। অফার ছাড়া যেসব ব্লেজার আছে সেগুলোও আমরা বাইরের তুলনায় দাম কম নিচ্ছি।

মেলায় দাম কম নেয়ার কারণ হিসেবে এই বিক্রয়কর্মী বলেন, এখানে প্রতিযোগীর সংখ্যা বেশি। তাছাড়া বাইরের তুলনায় বিক্রির পরিমাণও বেশি। সে কারণে কম লাভ, বেশি বিক্রি- এই নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এতে পিসপ্রতি লাভ কম হলেও বেশি বিক্রি হওয়ায় লাভ বেশি হচ্ছে।

বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফারের ব্লেজার তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে। মেলার প্রথম দিকে বিক্রির পরিমাণ কম হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি মেলার শেষ দিন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে।

এমএএস/এমএমজেড/এমকেএইচ