কে জিতবে শিরোপা? ঢাকা ডায়নামাইটস না কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স? আজ রাতে শেরে বাংলায় শেষ হাসি কার? সাকিব আল হাসান নাকি ইমরুল কায়েসের? জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। চারিদিকে গুঞ্জন। সারা দেশে এখন একটিই ‘টপিক’, আলোচনা-পর্যালোচনার বিষয় শুধুই ‘বিপিএল’।
Advertisement
এই বিপিএল করচায় খুব প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে আসছে আরও একটি বিষয়। তা হলো কে হবেন আসর সেরা পারফরমার? শেরে বাংলার উত্তর দিকে সাজানো মোটর সাইকেলটি পাবেন কে?
বিপিএলের প্রথম দুই বারের টুর্নামেন্ট সেরা সাকিব আল হাসানই শেষ পর্যন্ত ঐ মোটর বাইকের চাবি পাবেন? রাতে হাসিমুখে শেরে বাংলার সবুজ চত্বরে ঐ মোটর সাইকেলে আনন্দের চক্কর দেবেন? নাকি অন্য কেউ হবেন এবারের বিপিএল সেরা- সেটাই দেখার।
এত দেশী ও বিদেশী পারফরমার থাকার পরও শুধু সাকিবের নাম কেন উচ্চারিত হলো? আর কেউ কি নেই সম্ভাব্য আসর সেরা পারফরমারের দৌড়ে। আছে। অবশ্যই আছেন। তবে সে লড়াইয়ে সাকিব বাকিদের চেয়ে এগিয়ে।
Advertisement
তার দল ঢাকা ডায়নামাইটস ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানন্সকে হারিয়ে শিরোপা জেতার উন্মুখ অপেক্ষায়। সেটা যে শধু সাকিবের ডানায় ভর করে, তা নয়। তবে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, অধিনায়ক সাকিব ঢাকার সেরা পারফরমার।
ঢাকায় এমনিতেই এবার অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে দুই অলরাউন্ডার ব্যাট ও বলে আইপিএল সহ বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর মাতান, সেই সুনিল নারিন এবং আন্দ্রে রাসেলও এবার সাকিবের দল ঢাকায়। এবারের বিপিএলে তারাও ভাল খেলছেন। ব্যাট ও বলে চৌকস নৈপুন্য দেখিয়ে ঢাকার অগ্রযাত্রায় রেখেছেন কার্যকর অবদান ও বড় ভূমিকা। কিন্তু কৃতিত্বে ও সাফল্যে সাকিব ঐ দুই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডারের চেয়েও এগিয়ে।
পরিসংখ্যানকে নিয়ামক ধরলে সাকিব আল হাসান এ মুহূর্তে এবারের বিপিএলের এক নম্বর অলরাউন্ডার। যার নামের পাশে ২৯৮ রান আর ২২ উইকেট । অন্যদিকে আন্দ্রে রাসেল ২৯৫ রান করার পাশাপাশি দখল করেছেন ১৪ উইকেট। আরেক ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার সুনিল নারিনও আছেন খুব কাছাকাছি। ২৭৯ রান এবং ১৮ উইকেট ।
এছাড়া অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যরা বেশ পিছিয়ে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পাকিস্তানি রিক্রুট শহীদ আফ্রিদী বেশ পিছনে। আফ্রিদির রান ১৪১ , আর উইকেট ১৬ টি।
Advertisement
টুর্নামেন্ট সেরা হতে হলেই যে অলরাউন্ডার হতে হবে, এমন কথা ক্রিকেট অভিধানে লিখা নেই। তবে বাস্তবতা হলো, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সকে হিসেবের মধ্যে আনা হয়। সাধারণত ব্যাট-বলে নজর কাড়া পারফরমাররাই আসর সেরার দৌড়ে এগিয়ে থাকেন।
বিপিএলের ইতিহাসও সে সাক্ষীই দিচ্ছে। বিপিএলে এর আগের পাঁচ আসরে যারা ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হয়েছেন, তাদের মধ্যে ক্রিস গেইল ছাড়া বাকি সবাই অলরাউন্ডার। আাগেরবার এলিমিনেটর-১ আর ফাইনালে ঝড়ো ও ম্যাচ জেতানো শতক উপহার দিয়ে আসর সেরা পারফরমার হয়েছিলেন রংপুর রাইডার্সের ওয়েস্ট ইন্ডিজ রিক্রুট ক্রিস গেইল (২টি করে সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরিতে ৪৮২ রান)।
এছাড়া বাকিরা সবাই অলরাউন্ডার। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান হয়েছেন প্রথম দুইবারের (২০১২ সালে ২৮০ রান ও ১৫ উইকেট এবং ২০১৩ সালে ৩২৯ রানের সঙ্গে ১৫ উইকেট) আসর সেরা। তৃতীয় আসরে গিয়ে সেই কৃতিত্বের অধিকারি হন ইংলিশ অলরাউন্ডার আসার জাইদি (২১৫ রান ও ১৭ উইকেট)। চতুর্থ আসরের সেরা পারফরমার ছিলেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৩৯৬ রান ও ১০ উইকেট)।
তবে হ্যাঁ কোন ব্যাটসম্যান খুব ভাল খেলে সর্বাধিক বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হলে কিংবা তার একার ব্যাটিং নৈপুন্যে দল চ্যাম্পিয়ন হলে- তাকেই অগ্রগন্য ভাবা হয়। ঐ হিসেবেই আগের বার রংপুরকে নকআউট পর্বের প্রথম ধাপ অতিক্রম করে দেয়ার পর ফাইনালে ৬৯ বলে রেকর্ড ১৮ ছক্কায় ১৪৬ রানের হ্যারিক্যান ইনিংস গড়ে রংপুরকে চ্যাম্পিয়ন করে ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন গেইল।
সেই জায়গায় কেউ নেই এবার। রংপুর রাইডার্সের রিলে রুশো ছিলেন। তার প্রচুর সম্ভাবনা ছিল টুর্নামেন্ট সেরা পারফরমার হবার। এখনো রান তোলায় সবার ওপরে রুশো। ১ সেঞ্চুরি, ৫ ফিফটি, ৬৯.৭৫ গড় আর ১৫০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৫২৮ রান করে নিশ্চিতভাবেই এবারের বিপিএলের সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী তিনি। যদিও তার দল ফাইনালে নেই। তারপরও বাকিরা রান তোলায় অনেক পিছিয়ে। রান তোলায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুশফিকুর রহিমের (১৩ খেলায় তিন হাফ সেঞ্চুরি সহ ৪২৬) দল চিটাগাং ভাইকিংসও ফাইনালে আসতে পারেনি। এলিমিনেটর থেকেই বিদায় নিয়েছে।
একই ভাবে রান তোলায় তিন নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরানের (১১ খেলায় ৩৭৯) দল সিলেট সিক্সার্স নক আউট পর্বেই আসতে পারেনি। রাউন্ড রবিন লিগ থেকেই বিদায় নিয়েছে। মোদ্দা কথা, রিলে রুশোর ৫৫৮ রান টপকে যেতে পারেন এমন সম্ভাবনা খুব কম। প্রায় শুন্যের কোঠায়। কারণ রান সংগ্রহে চার ও পাঁচ নম্বরে থাকা এভিন লুইস (১১ খেলায় এক শতরান ও দুই ফিপটি সহ ৩৩৯) আর তামিম ইকবালই (১৩ খেলায় দুই হাফ সেঞ্চুরি সহ ৩২৬) শুধু টিকে আছেন। তাদের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সই আছে শুধু ফাইনালে।
কাজেই রুশোকে টপকে টপ স্কোরার হতে এভিন লুইস ও তামিমকে অসাধ্য সাধন করতে হবে। ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দিতে হবে। তাও হবে না। রান তোলায় সবার ওপরে যেতে হলে এভিন লুইসকে আজ ফাইনালে করতে হবে ২২০ রান, তাহলেই কেবল তার পক্ষে রুশোকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে ২৩২ রান পিছিয়ে থাকা তামিমের দরকার ২৩৩ রান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সেটা প্রায় অসম্ভব। আর শেরে বাংলায়তো আরও অলিক কল্পনা। যে মাঠে দলীয় ২০০ রানই হয় না, সেখানে একজন ব্যাটসম্যান সোয়া দু’শো করে ফেলবেন- তা যে আকাশ কুসুম কল্পনা। সেটা হবেও না। তাই ধরেই নেয়া যায়, রান তোলায় সবার ওপরে রুশো। এখন লুইস আর তামিমের কে তৃতীয় হন সেটাই দেখার।
হ্যাঁ আজ ফাইনালে সেঞ্চুরি করে দল জিতাতে পারলে হয়ত এভিন লুইস আর তামিমের একটা সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকবে ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হবার। না হয় সাকিবের সম্ভাবনাই বেশী।
তবে ‘ঘরের শত্রু’ বিভীষণের মত, সাকিবের ঘর ঢাকা ডায়নামাইটসেই আছেন দুজন প্রতিদ্বন্দ্বি। যারা টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে সাকিবের কাঁধেই নিঃশ্বাস ফেলছেন। দুজনই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার। একজন সুনিল নারিন, অফস্পিনার কাম হার্ডহিটার। অন্যজন আন্দ্রে রাসেল, পেসার কাম তুখোর হার্ডহিটার।
বাঁহাতি সাকিব ২৯৮ রানের পাশাপাশি স্পিন বোলিং দিয়ে ২২ উইকেট দখল করে অলরাউন্ডারদের মধ্যে এখনো এক নম্বর। আবার উইকেট শিকারেও সবার ওপরে। কিন্তু রান তোলায় তার খুব কাছেই আন্দ্রে রাসেল (২৯৫)। আবার উইকেট শিকারের লড়াইয়ে সুনিল নারিনও খুব কাছে (১৮টি)।
আজ ফাইনালে সাকিব একটা নজরকাড়া চৌকস নৈপুন্য দেখাতে পারলে তো কথাই নেই। ব্যাট হাতে হাফসেঞ্চুরি আর চার উইকেট শিকার করলে নিশ্চিতভাবেই ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হবেন সাকিব। আবার বেশী না ত্রিশোর্ধ্ব এক ইনিংস আর ২৫-৩০ রানে ৩ উইকেট শিকার করলেই হয়ত আসর সেরা হয়ে যাবেন।
সেখানে আন্দ্রে রাসেল ও সুনিল নারিনের জন্য সাকিবকে টপকে আসর সেরা হওয়া একটু কঠিন। তবে উইকেট শিকারে সাকিবের কাছাকাছি থাকা নারিনের সুযোগ আছে। এই ওপেনার কাম অফস্পিনার যদি শুরুতে একটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার পাশাপাশি ৪-৫ উইকেট শিকারী হয়ে যান, তখন আবার হিসেবটা অন্যরকম হবে।
অন্যথায় সাকিবের গড়পড়তা যেমন অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স থাকে, তেমন হলেই হয়ত ঢাকার অধিনায়কের হাতেই উঠবে মোটর বাইকের চাবি। তিন আসর পর আবার বিপিএল সেরা পারফরমার হবেন বাংলাদেশ তথা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ