বারকোড না পাওয়ায় সৌদি আরবে ব্যাপকসংখ্যক হজযাত্রী অভিভাবকহীন হয়ে পড়বেন বলে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতিবছরই আমাদের দেশ থেকে ব্যাংপকসংখ্যক হজযাত্রী পবিত্র হজব্রত পালন করতে যান। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ধর্মীয় এই বিধানটি পালন করতে গিয়ে তাদের অনেককেই নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। হজ এজেন্সিগুলোর নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতিতো আছেই, সরকারের বিশেষ করে ধর্মমন্ত্রণালয়ের দায়-দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ইতিমধ্যেই হজফ্লাইট শুরু হয়ে গেছে। অনেক হজযাত্রীই এখন মক্কা নগরীতে অবস্থান করছেন। এবার হজ নিয়ে বড় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ না পাওয়া গেলেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক হজ এজেন্সির বারকোড না পাওয়ার বিষয়টি। সহযোগী একটি দৈনিকের এক সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে হজযাত্রীদের সার্বিক তদারকি করতে হজ এজেন্সি ও হজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য সৌদি দূতাবাস এক হাজার ২৭০টি বিশেষ স্টিকার বা বারকোড দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে। এজেন্সির মোনাজ্জেমরা এর মাধ্যমে নিজ নিজ যাত্রীদের দেখভাল করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, হজ কার্যক্রমে অংশ নেয়া ৭৮৩ এজেন্সিকে একটি করে বারকোড দিয়ে বাকি ৪৮৭টি হজ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। অথচ এজেন্সিগুলোকে মাত্র ৪১৪টি দিয়ে বাকি ৮৫৬ বারকোডই নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর ফলে ৩৬৯ হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমরা এখনও বারকোড হাতে পায়নি। বারকোড না পাওয়ায় সৌদি আরবে এসব এজেন্সির প্রায় ২৬ হাজার হজযাত্রীর দেখভালের কেউ থাকবে না। তারা অভিভাবকহীন হয়ে পড়বেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১০০ জনের বেশি হজযাত্রী রয়েছে এ ধরনের ৪১৪ এজেন্সিকে একটি করে বারকোড দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো হজ চিকিৎসক দল, প্রশাসনিক দল, আইটি দল এবং সরকারি খরচে যাওয়া হজযাত্রীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে অনেক হজ এজেন্সিরই ৫০, ৬০, ৭০ বা ৮০ জনের মত হজযাত্রী রয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয়ের সিদান্ত অনুযায়ী তারা বারকোড পাবে না। আর বারকোড না পেলে সৌদিতে ২৬ হাজার হজযাত্রীর যাতায়াত, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয় দেখভালের জন্য কোনো অভিভাবক থাকবে না। এরফলে নিদারুণ দুর্ভোগে পড়তে হবে তাদের। আগে সৌদি আরব এ ধরনের ক্ষেত্রে তিন মাস মেয়াদি মালটিপল ভিসা দিত। কিন্তু গত বছর থেকে তা কমিয়ে একমাস করা হয়। বিকল্প হিসেবে সার্ভিস প্রোভাইডার ক্যাটাগরিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এক হাজার ২৭০টি বারকোড দেয় সৌদি দূতাবাস। কিন্তু বাংলাদেশের সব হজ এজন্সি এই বারকোড না পাওয়ায় এখন তারা মুশকিলে পড়েছে। আগে হজএজেন্সিগুলো ৩ মাসের মালটিপল ভিসা নিয়ে সৌদিতে গিয়ে হজযাত্রীদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করতো। এখন ভিসার মেয়াদ কমিয়ে দেওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বারকোডই হচ্ছে একমাত্র ভরসা। বারকোড না পাওয়া হজ এজেন্সিগুলোর অভিযোগ ৪১৪ এজেন্সিকে বিতরণের পর বাকি ৮৫৬টি বারকোড ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মন্ত্রী-সচিবের জন্য রাখা হয়েছে ২৭২টি।যারা হজব্রত পালন করবেন তাদের দেখভালের সার্বিক দায়িত্ব ধর্মমন্ত্রণালয়ের। এখনই মন্ত্রণায়ই যদি এক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে সেটি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। বারকোড না পাওয়া হজ এজেন্সিগুলোর ২৬ হাজার হজযাত্রী রয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী যাতে অভিভাবকহীন হয়ে না পড়েন সেটি অবশ্যই মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। কোটা পদ্ধতির নামে সরকারি লোকজনই সুবিধা নেবেন এটা কোনো কাজের কথা হতে পারে না। আমরা আশা করবো, যে সমস্ত হজ এজেন্সি বারকোড পায়নি তাদের অবশ্যই সেটি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি মেনে নেওয়া যায় না। সৌদিতে একজন হজযাত্রীও যাতে অভিভাবকহীন না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এইচআর/পিআর
Advertisement