খেলাধুলা

এটা যে অলরাউন্ডারদেরও ফাইনাল!

খালি চোখে এটা বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের ফাইনাল। প্রতিদ্বন্দ্বি ঢাকা ডায়নামাইটস আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে সেটাই শেষ কথা নয়। এ ম্যাচের আরও ইতিবৃত্ত আছে।

Advertisement

কাল ৮ ফেব্রুয়ারি হোম অফ ক্রিকেট শেরে বাংলায় বিপিএলের এবারের আসরে ফাইনালটি দুই বন্ধু আর দেশের ক্রিকেটের পাঁচ স্তম্ভের দুই শীর্ষ তারকা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালেরও লড়াই।

সাকিব ঢাকার অধিনায়ক, তামিম কুমিল্লার ক্যাপ্টেন নন, তাই কেউ কেউ সাকিব-তামিম লড়াই বলতে নারাজ। তামিম কুমিল্লার অধিনায়ক নন তো কি হয়েছে? দেশ সেরা ওপেনারতো কুমিল্লার ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে তো অবশ্যই, আর বিদেশি মিলিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে যে বা যারা খেলছেন, তাদের মধ্যে তামিমই সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম। বড় তারকা।

তারকা খ্যাতিতে তার চেয়ে আর একজনই বড়, শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু তার নামের পাশেও এখন সাবেক তকমা বসে গেছে। আর যারা খেলছেন সেই এভিন লুইস, থিসারা পেরেরাদের চেয়ে তামিমের তারকা খ্যাতি অনেক বেশি।

Advertisement

তাই কেউ কেউ যতই অনীহা পোষণ করুন না কেন, শেষ কথা হলো-তামিমই কুমিল্লার সবচেয়ে বড় নাম। তারকাদের সেরা তারকা। কাজেই আসল লড়াইটা বন্ধু সাকিবের সাথে তামিমেরই।

কিন্তু সেটাও শেষ কথা নয়। ফাইনালের আরও উপজীব্য বিষয় আছে। তা হলো কালকের ফাইনালের আরও একটি নামকরণ হয়েছে। অনেকেই এটাকে 'ব্যাটেল অল অলরাউন্ডার্স' বা 'অলরাউন্ডারদের লড়াই' বলে অভিহিত করেছেন।

দু দলে অনেক নামি দামি তারকা থাকলেও অলরাউন্ডাররাই দু পক্ষের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। এর মধ্যে ঢাকা ডায়নামাইটসের মূল শক্তি হলেন তিন অলরাউন্ডার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, পেস বোলিং অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল আর অফস্পিনিং অলরাউন্ডার সুনিল নারিন।

বলার অপেক্ষা রাখেনা সাকিব, আন্দ্রে রাসেল আর সুনিল নারিন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট। শুধু বিপিএল না, বিশ্বে যে কজন শীর্ষ টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট অলরাউন্ডার আছেন, তারা তিনজন তাদের অন্যতম।

Advertisement

যারা আইপিএল, বিগ ব্যাশ, সিপিএল, এসএলপিএল ও পিসিএল-সব ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরেই ব্যাট ও বলে সমান নৈপুণ্য দেখিয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। কার্যকর অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে নিজ দলের সাফল্যর রূপকারও হচ্ছেন। এবারের বিপিএলেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানেই প্রমাণ হয়ে যাবে সাকিব, নারিন আর আন্দ্রে রাসেলের কার্যকারিতা কেমন ছিল। ঢাকা ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে ২৯৮ রান করার পাশাপাশি সর্বাধিক ২২ উইকেট শিকারি।

ক্যারিবীয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট থেকে এসেছে ২৯৫ রান। আর পেস বোলার আন্দ্রে রাসেলের ঝুলিতে জমা পড়েছে ১৪ উইকেট।

এছাড়া প্রায় নিয়মিত ওপেন করা সুনিল নারিনও কম যাননি। ওপেন করতে নেমে ২৭৯ রান করা নারিন অফস্পিন বোলিং দিয়ে ১৮ উইকেট শিকারিও। তার মানে কি দাঁড়ালো? ঢাকার ঐ তিন অলরাউন্ডার মিলে করেছেন ৮৭২ রান। যা ঢাকার করা ২০৪৩ রানের প্রায় ৪০ শতাংশ। আর অন্যদিকে ঢাকার ঐ তিন অলরাউন্ডার মিলে প্রতিপক্ষের ৫৪ উইকেট নিয়েছেন। যা মোট উইকেটের ৬০ ভাগেরও বেশি।

কাজেই আর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের দরকার নেই যে ঐ তিন অলরাউন্ডার ঢাকার জন্য কত কার্যকর অবদান রেখেছেন। এর বাইরে শুভাগত হোমও শুরুর দিকে দু তিনটি ম্যাচে ভাল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও অফস্পিনার হিসেবে ভাল (৭ উইকেট আর ৯৩ রান) করেছেন।

মোদ্দা কথা, প্রায় খেলায় ঢাকার সাফল্যর পিছনে ঐ চার জনের অবদানই ছিল বেশি। প্রায় একই চিত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেরও। সেখানেও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি আর শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা এবং বাংলাদেশের সাইফউদ্দীন অনেক কার্যকর পারফরম করেছেন।

পেরেরা এখন অবধি ৫ উইকেট শিকারের সাথে ১৫১ রান করেছেন। আফ্রিদি রান কম (১৪১) করলেও বল হাতে ১৬ উইকেট নিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন। আর তরুণ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীন প্রায় ম্যাচে ভাইটাল ব্রেক থ্রু উপহারের সাথে দলের সর্বাধিক ১৮ উইকেট শিকারি। তাই ঢাকা আর কুমিল্লার ফাইনালে দু দলের অলরাউন্ডাররাই হতে পারেন সাফল্যের অন্যতম রূপকার ও স্বার্থক হাতিয়ার।

এদিকে দুই দলের কোচও মনে করেন, কালকের মহারণে অলরাউন্ডাররা রাখতে পারেন অনেক বড় ভূমিকা। ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রশিক্ষক মোহাম্মদ সালাউদ্দীন দুজনেরই মত, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অলরাউন্ডাররা দলের বড় সম্পদ ও অস্ত্র। যে দলে যত বেশি সংখ্যক অলরাউন্ডার থাকে, সেই দলের শক্তিও তত বেশি থাকে।

তাদের ধারণা, শুক্রবারের রাতের ফাইনালেও দু দলের সম্ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন অলরাউন্ডাররা। তবে তারাই ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দেবেন এমন মানতে নারাজ দুই কোচ।

কুমিল্লা দৌনাচার্য্য সালাউদ্দীনের মত, অলরাউন্ডারদের একটা বড় ভূমিকা থাকবে। কারণ টিম সাজাতে বা ব্যালেন্স আনতে অলরাউন্ডারদের ভূমিকা সবসময়ই বেশি।

সালাউদ্দীন মনে করেন অলরাউন্ডারদের দিক থেকে ঢাকা এগিয়ে। তিনি বলেন, 'ঢাকা টিমের এই অ্যাডভাান্টেজ আছে। কারণ তাদের তিন-চারজন অলরাউন্ডার আছে, তারা যদি খেলে তবে বাড়তি ২ জন প্লেয়ার খেলাতে পারবে দলটি। আমাদেরও ভাল অলরাউন্ডার আছে। তারপরও বলব ঢাকা এই দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছে।'

অন্য দিকে ঢাকা কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, 'সংখ্যায় বেশি চোখে পড়লেও আমার মনে হয় দু দলের অলরাউন্ডারদের শক্তি ও কার্যকারিতা প্রায় সমান। আমাদের যেমন সাকিবের সাথে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্দ্রে রাসেল আর সুনিল নারিন আছেন, আবার কুমিল্লায়ও শহীদ আফ্রিদি আর থিসারা পেরেরা আছেন। যাদের বল ও ব্যাট সমান কার্যকর। আফ্রিদির লেগস্পিনে এখনো ধার আছে। আর দুজনই শেষ দিকে হাত খুলে খেলতে পারেন। কাজেই আমার মনে হয় অলরাউন্ডারের শক্তিটা দু দলের প্রায় সমান সমান।'

দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কোন দলের অলরাউন্ডাররা জ্বলে ওঠেন, কারা দল জেতাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ