‘সকাল থেকে হঠাৎ আমার মেয়ে তাহিকে (৫) খুঁজে পাচ্ছিলাম না। খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায় দশা। আদরের সন্তান আমার অত্যন্ত মেধাবী ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বিকেলে যখন ওর মরদেহ কাশবনে পাওয়া গেলো তখন ভাবছিলাম কোনো শত্রুও কি এমন করে? ওইটুকু বাচ্চাকে ধর্ষণের পর ইট দিয়ে আঘাতে আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর কারো সন্তানের বেলায় না ঘটে।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ৩টায় কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এভাবেই জাগো নিউজের কাছে মেয়ে তাফান্নুম তাহিকে ধর্ষণ ও হত্যার পর নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করেন মা আবিদা সুলতানা।
গত ২৭ জানুয়ারি গাজীপুর গাছা থানাধীন শরিফপুর এলাকায় একটি কাশবন থেকে ৫ বছরের শিশু তাফানুন্ম তাহির বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাহি স্থানীয় মাতৃছায়া আইডিয়াল স্কুলের নার্সারির ছাত্রী ছিল। তাহির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এরপর ঘটনায় জড়িত মো. রিফাত (১৬) নামে এক তরুণকে টঙ্গীর বোর্ডবাজার এলাকা থেকে আটক করে র্যাব-১ এর একটি দল।
Advertisement
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত জানায়, স্থানীয় তাকফিয়াতুল উলুম মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাত। তবে ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বয়ষ ১৬। ভিকটিম তাহি সম্পর্কে তার খালাতো বোন। রিফাত তাহির বাবার টার্কি মুরগির ফার্মে চাকরি করতো। সেই সুবাদে তাহিদের বাসাতেই থাকতো রিফাত। টার্কি মুরগির ফার্ম থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাহির সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয় রিফাতের। তাহি জানায় সে নানিকে খুঁজছে। এরপর রিফাত নানির সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে পাশের কাশবনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। জানাজানির ভয়ে তাহিকে ইট দিয়ে আঘাতে আঘাতে মাথা থেতলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় রিফাত।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ান বিন কাশেম বলেন, রিফাত এ বয়সে যে বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই উদ্বেগের। তার মোবাইলে পর্নোগ্রাফির ভিডিও পাওয়া গেছে। এলাকায় উচ্ছৃঙ্খলার অভিযোগ ছিল নিত্য দিনের। গতকাল তাকে আটক করা হলেও র্যাব-১ কে নানাভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে সে। তবে র্যাবের কাছে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে রিফাত। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন কক্ষের পেছনেই বসা ছিলেন নির্মমভাবে নিহত তাহির মা আবিদা সুলতানা ও বাবা মো. হুমায়ুন কবির। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে মা আবিদা সুলতানা বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে দ্বিতীয়বার এ ধরনের কাজ করার সাহস কেউ না পায়। ওর মতো অল্প বয়েসের ছেলে (রিফাত) এখনি এমন অন্যায় করতে পারে; বড় হলে আরও বড় অন্যায় করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কথায় আছে বিষ গাছ বড় হওয়ার আগেই উপড়ে ফেলা ভালো। এখনই এর সমূলে উপড়ে ফেলা দরকার। ওর যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’
আবিদা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে খুব ট্যালেন্ট ছিল। অন্য বাচ্চারা যখন কার্টুন দেখতো তখন আমার মেয়ে ক্রাইম প্রোগ্রাম ‘সিআইডি’দেখতো। ওর মতো মেয়েকে এভাবে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা মানা যায় না।’
Advertisement
এ সময় বাবা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি আমার আদরের বাচ্চা হারাইছি। আমি সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাব, ওই ঘাতকের যেন ফাঁসি নিশ্চিত করা হয়। আর এ ধরনের ঘটনা কোনো মা কিংবা বাবা মেনে নিতে পারবেন না। এ জন্য সব বাবা-মায়ের উচিত আরও সতর্ক ও সজাগ থাকা। মেয়ে কখন কোথায় যায় না যায়, হুটহাট যারতার হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেবেন না।’
জেইউ/এনডিএস/আরআইপি