একুশে বইমেলা

যেতে হবে বইমেলায়

বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে বইমেলা। বইমেলার ইতিহাস বেশি দিনের পুরনো নয়। ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতিতে ১৯৫২ সালের পর থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে বইমেলা। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় বইমেলা। বাঙালির প্রাণের মেলা নিয়ে লিখেছেন মরিয়ম আক্তার-

Advertisement

চলছে ২০১৯ সালের অমর একুশে বইমেলা। তাই পাঠকদের মনে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। দেশি-বিদেশি গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ কোন ধরনের বই বাদ নেই। বইমেলায় পাওয়া যায় সব ধরনের বই। বইমেলায় লেখক-পাঠক সুবর্ণ সুযোগ পায় নতুন বই কেনার। তাই তো কবিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়,‘কোথায় মিশেছে দিশি দিশি হতেবিপুল জ্ঞানের ধারা, শত মনীষীর চিন্তার বাণী, আনন্দে আকুল পারা।’

বই মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। আনন্দসন্ধানী মানুষের জাগতিক জীবনকে বস্তুগত ভোগ কিছুতেই প্রকৃত আনন্দ দিতে পারে না। প্রকৃত আনন্দ দানের জন্য নীরব হৃদয় মেলে আছে অগণিত বই। মানুষের জীবনে বই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। যা জ্ঞানের আধার, আনন্দের সুধা ভান্ডার। বই মানুষের নিত্যসঙ্গী হলেও কিছু কিছু বই পাঠ করে মানুষের জীবন পড়ে যায় ধ্বংসের সান্নিধ্যে। তাই বই কেনার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিছু কিছু বই এড়িয়ে চলতে হয়।

> আরও পড়ুন- প্রথম সপ্তাহেই সন্তুষ্ট প্রকাশকরা 

Advertisement

এসব বই পাঠ করে মানুষ ক্ষণিকের জন্য আনন্দ পায় ঠিকই, কিন্তু এসব বই মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। তাই মানুষের উচিত ধ্বংসরূপী বইগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা। মানুষের প্রয়োজন সেসব বই পড়া, যেসব বই আনন্দ দান করে, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে। বিখ্যাত দার্শনিক ও সাহিত্যিক টলস্টয়কে জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, ‘জীবনের তিনটি বস্তু প্রয়োজন- তা হচ্ছে বই বই আর বই।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মানুষের বই দিয়ে তার অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে।’

সমাজে একেক মানুষের রুচি একেক রকমের হয়ে থাকে। তারা নিজেদের রুচি অনুযায়ী বই নির্বাচন করে। যেমন সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, ভূগোল, আইন, গল্প, কবিতা ইত্যাদি। বই মানুষকে দান করে সত্যিকারের জ্ঞান। পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে পুরো পৃথিবীকে ভ্রমণ করে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জানতে পারছে নানা দেশ জাতি ও সমাজকে।

তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বিশাল বিশ্বের আয়োজন মন মোর জুড়ে থাকে অতিশুদ্র তারি এক কোণে। সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ, ভ্রমণ বিত্তান্ত, আছে যাকে অক্ষয় উৎসাহে।’

সমাজে কিছু মানুষ আছে, যারা স্কুল-কলেজের জীবনের সমাপ্তিতে বই পড়ার সমাপ্তি ঘটায়। যার জন্য তাদের জ্ঞানের ভান্ডার হয়ে যায় শূন্য। বর্তমান সমাজব্যবস্থা, পৃথিবীর অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই তাদের। এক অন্ধকারে বসবাস করছে এসব মানুষ। প্রমথ চৌধুরী তার বই পড়া প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শূন্য, সে জাতির ধনের ভান্ডারও শূন্য।’

Advertisement

> আরও পড়ুন- বইমেলায় বিক্রেতাবিহীন বইয়ের স্টল 

কিন্তু জ্ঞান অর্জন করতে হলে বই পড়া আবশ্যক। শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ হলো সাহিত্যচর্চা। সাহিত্যচর্চা করতে হলে বই পড়া ছাড়া উপায় নেই। বই মানুষের নিঃস্বার্থ বন্ধু। বই কোন স্বার্থ ছাড়াই মানুষকে করে তোলে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত। দান করে এক অনুভূতিহীন আনন্দ। নীরবে শুধু মানুষকে করে তোলে জ্ঞানিগুণি।

বই কখনো কারো সাথে শত্রুতা করে না। মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে দিয়ে যায় জ্ঞান আর আনন্দ। মানুষের জ্ঞানের ভান্ডারের সীমাবদ্ধতা নেই। তাই যত বেশি বই পড়বেন; ততই জ্ঞানের অধিকারী হবেন। কথায় আছে, ‘যতই পড়িবে ততই শিখিবে।’ তাই জীবনে অনেক কিছু শেখার জন্য বইকে বানাতে হবে নিত্যসঙ্গী।

কেবল স্কুল-কলেজের বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে পড়তে হবে বিচিত্র ধরনের বই। যাদের স্কুল-কলেজের সমাপ্তি হলে বই পড়ার সমাপ্তি ঘটে, তাদের মনের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। তাই আমাদের জ্ঞানকে বিস্তৃত করতে হলে পড়তে হবে অসংখ্য বই। আর একসাথে এমন অসংখ্য বই পেতে হলে যেতে হবে বইমেলায়। বইমেলায় মানুষ আর বই মিলেমিশে যেন একাকার।

বিখ্যাতজনরা বলেছেন, ‘রিডিং মেকস অ্যা ম্যান কমপ্লিট’। অর্থাৎ ‘কেবল অধ্যয়নই পারে মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণ করতে।’ তাই জীবনকে পরিপূর্ণ করতে হলে আমাদের সুনির্বাচিত বই পাঠ করতে হবে। আর সেসব বই কিনতে আমাদের ছুটে যেতে হবে বইমেলায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

এসইউ/আরআইপি