নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বান্ধবী নাসিক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা আবারো আলোচনায় এসেছেন। প্রাক্তন স্বামীর বাড়িতে পুলিশ ও ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হানা দিয়ে ফেরত এনেছেন আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল। মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বার্মাস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নীলা নাসিক ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নির্বাচনের কিছুদিন পর থেকেই ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। নূর হোসেনের স্ত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন মহলে প্রভাব বিস্তার ছাড়াও কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন রাজনীতিক নেতা এবং প্রশাসনের অনেক কর্তা ব্যক্তির সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এ নিয়ে স্বামী সায়েমের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে ২০১৩ সালের ২৫ জুন তাদের ডিভোর্স হয়। গত ১৮ মে নীলাকে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জন্য আটকের পর ছেড়ে দেয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। আরো জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে জুয়েল নামে এক ব্যক্তির খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিন্নাহ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে গ্রেফতারকৃত এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে হত্যার সঙ্গে নীলা জড়িত বলে স্বীকার করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মে পুলিশ নীলাকে গ্রেফতার করে। গত বছরের ৮ আগস্ট প্রায় দুই মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। কারাভোগের সময়ে নীলা তার সাবেক স্বামী সায়েমের কাছে আবার ফিরে যাওয়ার আকুতি মিনতি করলে সন্তানের দিকে তাকিয়ে সায়েম মোটা অংকের টাকা খরচ করে নীলাকে জেল থেকে জামিনে বের করে বলে সায়েম জানায়। কিছুদিন সায়েমের সঙ্গে ভালভাবেই নীলার দিন কাটে। তবে দুই বছর আগে সায়েমকে ডিভোর্স দিয়েছে নীলা এমন দাবি থাকলেও গত বছরের ঈদ-উল-আযহার ছুটিতে নীলা ও সায়েমসহ পরিবারের লোকজনদের কক্সবাজারে অবকাশ কাটাতে দেখা গেছে। ওই সময়ে নীলার সঙ্গে সায়েমের ঘনিষ্ট ছবিও ফেসবুকে আপলোড করে নীলা। এদিকে কিছুদিন যাবত সায়েমের সঙ্গে নীলার দেখা দেয় চরম বিরোধ। ওই বিরোধের জের ধরেই সায়েমের বিরুদ্ধে নীলা থানায় অভিযোগ দায়ের করে তার আসবাবপত্র ফেরতের জন্য। অভিযোগ দায়ের করার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরাফত উল্লাহ নিজেই নীলার সাবেক স্বামী সায়েমকে থানায় ডেকে মালামাল ফেরত দেয়ার কথা বলে। সোমবার রাতে থানায় বসে মালামাল ফেরত দেয়ার বিষয়টি মীমাংসা হয়। তবে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে নীলার দাবিকৃত সমস্ত মালামাল ফেরত দিতে রাজি হয় সায়েম। থানার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার বিকেলে এসআই সামছুল আলম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বার্মাস্ট্যান্ড এলাকায় সায়েমের বাড়িতে যায় নীলাকে মালামাল বুঝিয়ে দিতে। তখন নীলার লোকজন সায়েম ও তার ভাগিনা ফরিদ আহমেদসহ ৫ জনকে মারধর করে। এর মধ্যে ফরিদ জখম হয়। তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নীলা আঘাত করে বলে জানিয়েছেন সায়েমের স্বজনরা। সায়েম ও তার পরিবারের লোকজনকে এসময় নীলা ও তার লোকজন প্রাণ নাশসহ বিভিন্ন হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাসছুল আলম জানান, নীলার দাবিকৃত সব মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সায়েমের অভিযোগ, মালামাল বুঝে নেয়ার সময়ে তার উপর হামলার ঘটনাও ঘটে। সায়েম সাংবাদিকদের জানায়, নীলা ও তার ক্যাডাররা কিছুদিন যাবত তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। এমনকি ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িতে নীলা ও তার ক্যাডার বাহিনী হামলা করেছিল বলে অভিযোগ করেন নীলার প্রাক্তন স্বামী। হোসেন চিশতী সিপলু/এসএস/এমএস
Advertisement