একুশে বইমেলা

বটতলা থেকে যেভাবে প্রাণের মেলা

একটি মেলা থেকে এত আলো! সম্ভবত, দুনিয়ার আর কোনো আয়োজন থেকেই মেলে না। একটি মেলা আর একটি জাতিসত্তা যেন সমান তালে হাঁটছে। ৪৬ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউসের সামনে বটতলায় একটুকরো চটের ওপর মাত্র ৩২টি বই নিয়ে যে মেলার সৃষ্টি, সে মেলায় এখন সহস্র বই প্রকাশিত হয়। আর একটি মেলা দিয়েই গোটা জাতিকে ভাষা-সংস্কৃতির কেন্দ্রে আনার প্রয়াস চলছে।

Advertisement

বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের মতোই অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এ মেলার সূচনা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ওই বছর তিনি ৩২টি বই এনেছিলেন কলকাতা থেকে। চিত্তরঞ্জণ সাহা প্রতিষ্ঠিত ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বইগুলো ছিল শরণার্থী লেখকদের। এখান থেকেই মূলত বইমেলার গোড়াপত্তন।

বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণেই ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মেলা চালিয়ে যান চিত্তরঞ্জন সাহা। এই সময়ে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে থাকেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সমিতিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। কিন্তু সে বছর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা আজ দেশের প্রধানতম মেলার রূপ পেয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে মেলার আঙিনা বেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বিস্তৃত হয়েছে। কোনো না কোনো বিচারে মেলাটি বৈশ্বিক রূপও পাচ্ছে।

Advertisement

একটি প্রকাশনী সংস্থার মধ্য দিয়ে যে মেলার যাত্রা, সে মেলায় এ বছর ৫২৩টি সংস্থা অংশ নিয়েছে। অমর একুশে বইমেলায় এবারে ৭৭০টি স্টল এবং ২৪টি প্যাভেলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছে।

এএসএস/এমবিআর/এমকেএইচ