আন্তর্জাতিক

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে আলোচনা করতে একটি কমিটি গঠনের পক্ষে ভোট দিয়েছে মিয়ানমারের পার্লামেন্ট। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা পার্লামেন্টে বুধবারের এই ভোটাভুটিতে সেনাবাহিনীর সংসদ সদস্যরা বিরোধিতা করলেও তা ধোপে টিকেনি।

Advertisement

মিয়ানমারের সেনা রচিত সংবিধানে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গত সপ্তাহে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে একটি জরুরি প্রস্তাবনা জমা দেয়। সেনা রচিত ওই সংবিধানকে অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে এনএলডি। গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দেশটির শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি। বুধবার পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনী কমিটির ওপর যখন ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়, তখন সেনাবাহিনীর সংরক্ষিত আসনের এমপিরা দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন; যা মূলত ওই ভোটাভুটির বিরোধিতা করেই।

আরও পড়ুন : মিয়ানমারের পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষোভ 

২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের জেরে দেশটির সামরিক এবং বেসামরিক নেতাদের ওপর ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মাঝে আকস্মিকভাবে সংবিধান সংস্কারের এই উদ্যোগ নিয়েছে সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডি। ওই বছর সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে প্রায় সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

Advertisement

পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ৬১১ সদস্যের মধ্যে ৪১৪ জন সংবিধান সংশোধন কমিটি গঠনের পক্ষে ভোট দেন। সংসদের দুই কক্ষেই সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সংসদের স্পিকার টি খুন মিয়াত বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন কমিটিতে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সমানুপাতিক হারে প্রতিনিধি থাকবে।

সংবিধান সংশোধনের নতুন এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এনএলডির সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার তুন তুন হেইন।

আরও পড়ুন : সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অং সান সু চি 

২০১৫ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পর এই প্রথম দেশটির সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করছে এনএলডি। ২০০৮ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে। এতে সংসদের দুই কক্ষেই সেনাবাহিনীর জন্য এক চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়।

তবে মিয়ানমারের সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য অন্তত পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন। সংরক্ষিত আসন থাকায় সংসদের যে কোনো ভোটাভুটিতে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে সেনাবাহিনীর।

Advertisement

মঙ্গলবার পার্লামেন্টের বিতর্কে এনএলডির সংসদ সদস্যরা বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য জনগণের সমর্থন আছে। নতুন এই কমিটি সব পক্ষকে কথা বলার সুযোগ দেবে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মিত্র জোট ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) বলছে, সংশোধনের প্রস্তাবনা সংবিধান সম্মত উপায়ে করা হয়নি।

আরও পড়ুন : ব্যর্থ প্রেমই সু চির মুসলিম বিদ্বেষের কারণ!

ইউএসডিপির সংসদ সদস্য থং আয়ে বলেছেন, ‘আমরা সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করছি না। তবে জনস্বার্থে সংবিধানের যথাযথ অনুচ্ছেদ যথাযথ সময়ে সংশোধন করা উচিত। এটা অবশ্যই আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই করতে হবে।

২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি ভূমিধস জয় পেলেও সেনাবাহিনীর তৈরি ওই সংবিধানের কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সু চি। সেনাবাহিনীর তৈরি ওই সংবিধানে বলা হয়, স্বামী, স্ত্রী অথবা সন্তানের যদি বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে তাহলে দেশটির কোনো নাগরিক মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্বামী মাইকেল আরিসের ঘরে দুই ছেলে রয়েছে।

আরও পড়ুন : মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নতুন আতঙ্ক আরাকান আর্মি

প্রেসিডেন্ট হতে না পারায় দেশটিতে ‘স্টেট কাউন্সিলর’ নামে নতুন একটি পদ তৈরি করেন তিনি। প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি মর্যাদাশীল এই পদে গত তিন বছর ধরে আসীন রয়েছেন সু চি।

দেশটির প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে। মিয়ানমারে ৫০ বছরের সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনবেন বলে নির্বাচনের আগে থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি। সূত্র : রয়টার্স।

এসআইএস/আরআইপি