দেশজুড়ে

যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থীই কাল্পনিক!

বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসার প্রত্যেক শ্রেণিতে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মাদ্রাসার ভর্তি রেজিস্ট্রারে তাই দেখানো হয়েছে। তবে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসাটিতে আকস্মিক পরিদর্শনে যান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হুমায়ুন কবির। তিনি মাদ্রাসাটির প্রথম হতে দশম শ্রেণি কক্ষ ঘুরে একটি শ্রেণিতে (দশম শ্রেণি) দুইজন ছাত্রসহ একজন শিক্ষককে ক্লাস নিতে দেখতে পান। অপর শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকশূন্য দেখতে পান। তবে শিক্ষক লাইব্রেরিতে গিয়ে ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত দেখতে পান।

Advertisement

পরে ইউএনও’র মাদ্রাসা পরিদর্শনের খবরে অন্য শিক্ষকরাসহ কমিটির অনেক সদস্য মাদ্রাসায় উপস্থিত হন। তবে উপস্থিত হয়নি কোনো শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসার একটি কক্ষে বিগত কয়েক বছরের সরকারের দেয়া বই পড়ে থাকতে দেখে অবাক হন ইউএনও। কারণ বই নেয়ার কোনো শিক্ষার্থী নেই মাদ্রাসাটিতে।

বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বলেন, সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় সালাম দিতে যাওয়ার সময় হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষাকার্যক্রম দেখার জন্য ঢুকে পড়ি। দুঃখের বিষয় মাদ্রাসাটির প্রথম হতে দশম শ্রেণি ঘুরে একটি শ্রেণিতে সম্ভবত (দশম শ্রেণি) দুইজন ছাত্রসহ একজন শিক্ষককে ক্লাস নিতে দেখা যায়। অপর শ্রেণি কক্ষগুলোতে গত কয়েক বছরে কোনো ছাত্র-ছাত্রী হাজির হয়নি বলে জানতে পারি। অর্থাৎ পাঠদান কার্যক্রম প্রয়োজন হয়নি।

ইউএনও বলেন, শিক্ষক লাইব্রেরিতে গিয়ে ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জন হাজির দেখতে পাই। আমার আসার খবর জেনে অনেক শিক্ষক উপস্থিত হলেও কোনো ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত হয়নি। হাজিরা খাতায় শিক্ষকদের হাজিরা থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র হাজিরা খাতায় কোনো শিক্ষার্থীর হাজিরা দেখা যায়নি। প্রত্যেক শ্রেণিতে ২৫-৩০ জন করে ছাত্রের নাম থাকলেও অধিকাংশ নামই ভুয়া। অর্থাৎ অধিকাংশ নাম কাল্পনিক।

Advertisement

এছাড়া অন্য স্কুলে পড়ে এমন ছাত্রের নাম খাতায় লিখে কিছুদিন পরপর তাদেরকে প্রায় শতভাগ হাজির দেখানো হয়। মাদ্রাসাটি ১৯৮৫ সালে স্থাপিত হয় ও ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি না হলেও এমপিও টেকানোর জন্য প্রয়োজনে ছাত্র ম্যানেজ করে তাদের পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে পাস করানো হয়। মাদ্রাসার বিগত কয়েক বছরের সরকারি বই বিতরণ করা হয়নি, কারণ বই নেয়ার কোনো শিক্ষার্থী নেই মাদ্রাসাটিতে।

ইউএনও হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে দুর্গাপুর হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয় কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সাইফ আমীন/বিএ

Advertisement