জাতীয়

রোহিঙ্গা ইস্যু আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে চলেছে : কানাডা

বাংলাদেশ সফররত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত বব রে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের বিচিত্র দিক রয়েছে। তা একই সঙ্গে জটিল ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফলাফল। রোহিঙ্গা ইস্যু আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে চলেছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর পড়বে।

Advertisement

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের সহায়তায় এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশন।

বব বরে বলেন, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ ভূমি দেশটির ক্ষমতার প্রধান অংশীদার সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থগোষ্ঠীর বহুমুখী প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই এ সংকট ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন, ধর্মীয় নিধন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এ সংকটের বিভিন্ন প্রবণতা তৈরি করেছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে উল্লেখ করে বব রে বলেন, আজ হোক কাল হোক তাদের সেখানেই ফিরে যেতে হবে। তবে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisement

এ ইস্যুতে বাংলাদেশের নেয়া উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

তার মতে, দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করায় তারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দূরবর্তী অবস্থানে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো দৃঢ অবস্থান গ্রহণ করতে পারছে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সুরাহার পথ খোঁজা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অতীতে আমরা মিয়ানমারের দিকে বিশেষ নজর দিইনি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য পাঁচ-দশ বছরও লেগে যেতে পারে। যেহেতেু এটি একটি আঞ্চলিক সংকট, ফলে তা নিরসনের ক্ষেত্রে একমাত্র চীনই আমাদের সহায়তা করতে পারে।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক সহায়তায় তা সম্ভব না হলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো যেমন জাপান, কিংবা আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।

Advertisement

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেজর জেনারেল (অব.) এএনএম মুনিরুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর এক বছর পার হয়েছে, কিন্তু সমাধানের পথে আমরা বিশেষ এগোতে পারিনি। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জন্য নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে। বিশেষত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের মধ্যে তাদের সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সিভিল সমাজের মধ্যকার সংলাপ ও আলোচনা কার্যকরী হতে পারে।

প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত হতে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আইপিএজি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মুনীর খসরু।

জেপি/জেডএ/জেআইএম