আগের বারের ঠিক বিপরীত অবস্থা ঢাকা ডায়নাইমাইটসের। সাকিবের দল গতবার রবিন লিগে দুই নম্বর হয়ে সোজা কোয়ালিফায়ার-১’এ খেলেছে। এক নম্বর হয়ে আসা তামিমের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৯৫ রানের হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে পৌছে গিয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যরা। আর এবার প্রথম দিকে দাপট দেখিয়ে ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জিতে সবার ওপরে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেরা চারে জায়গা পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
Advertisement
শেষ চার নিশ্চিত করতে রবিন লিগের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটসকে। সেই ম্যাচে খুলনা টাইটান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে অবশেষ শেষ চারে সাকিবের দল। চার নম্বর হয়ে আসায় এলিমিনেটরে ঢাকার প্রতিপক্ষ ছিল তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ চারে জায়গা পাওয়া চিটাগং ভাইকিংস।
গতকাল (সোমবার) বিকেলে মুশফিকের চিটাগং ভাইকিংসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে এলিমিনেটর পর্ব পার হয়ে কোয়ালিফায়ার-২’তে এখন ঢাকা। প্রতিপক্ষ কোয়ালিফায়ার-১’এ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হেরে যাওয়া রংপুর রাইডার্স। আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মাশরাফির রংপুরের সাথে সেই অঘোষিত সেমির যুদ্ধ সাকিবের ঢাকার। বিজয়ী দল পৌছে যাবে যাবে ফাইনালে, ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার সাথে লড়তে। আর পরাজিত দল বিদায় নিবে এবারের বিপিএল থেকে।
ক্রিকেট খেলাটাই এমন। যেখানে কাগজে-কলমের সাথে মাঠের হিসেবের মিল হয় খুব কম। আর সেটা যদি হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, তাহলে তো কথাই নেই। যে ফরম্যাটের পরতে পরতে ওঠা নামা আর অনিশ্চয়তার পালা। এবারের বিপিএলেও তেমনটাই দেখা যাচ্ছে।
Advertisement
কাগজে কলমের অন্যতম শীর্ষ দল ঢাকা চমৎকার সূচনার পরেও একসময় অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিল। আর তুলনামূলক কম শক্তির ও প্রায় তারকাশূন্য চিটাগং ভাইকিংস ও তুলনামূলক শক্তিশালি সিলেটকে পিছনে ফেলে চলে এসেছিল শেষ চারে। তাও তিন নম্বর হয়ে, কাগজে-কলমের অন্যতম সেরা দল ঢাকারও ওপরে থেকে।
তাই বিপিএলের শেষ দিকে এসে অনেকের মনেই প্রশ্ন, ‘আচ্ছা ঢাকা ডায়নামাইটস কি নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পেরেছে? কাগজে কলমের ঢাকাকে কি মাঠে পাওয়া গেছে? এ প্রশ্ন অনেকেরই। অঘোষিত সেমির যুদ্ধের আগে জাগো নিউজের কাছ থেকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন দলটির কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন।
সুজনের কথার সারমর্ম হলো, তার দলের শুরুটা ভাল ছিল বেশ। কিন্তু মাঝখানে গিয়ে ছন্দপতন ঘটেছে। তখন বেশ কিছু ম্যাচের ফল প্রতিকূলেও গেছে। আবার উপল থারাঙ্গা দলে যোগ দেবার পর ঢাকা আবার ছন্দ ফিরে পেয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজ দেশ শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে পঞ্চাশটির ওপরে ম্যাচ খেলা উপুল থারাঙ্গা শ্রীলঙ্কার স্লো ও লো পিচে খেলে খেলে বড় হয়েছেন। হাত পাকিয়েও ফেলেছেন। কাজেই স্লো পিচে করণীয় কাজ খুব ভাল জানেন। বাংলাদেশের প্রায় সব পিচে প্রচুর খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার। তাই শেরে বাংলার তুলনামূলক স্লো ও লো পিচে কেমন টেকনিক-স্টাইল আর অ্যাপ্রোচ দরকার?- এসব তার নখদর্পনে।
Advertisement
এ কারণেই এই মাঠে শেষ দুই খেলায় যথাক্রমে ৪২ ও ৫১ রানের এক জোড়া কার্যকর ইনিংসও উপহার দিয়েছেন। শুরুতে যে কাজটি করেছেন আফগান ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই। শুরুর তিন-চার ম্যাচে জাজাইয়ের ব্যাটে রানের ফলগুধারা বয়েছে। ঢাকাও ভাল খেলেছে। তখন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও স্বচ্ছন্দে খেলে রান করেছেন। ঢাকাও ছিল ছন্দে।
খেলা যত গড়িয়েছে সাকিবের ব্যাট কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রান উঠছে কম। একইভাবে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেল আর কাইরন পোলার্ডও সে ভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। সব মিলে ঢাকা আসলে সামর্থ্য অনুযায়ী পারফরম করতে পারেনি।
তবে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দাবি, ‘আমার বিশ্বাস আমরা এখন মোটামুটি ছন্দ ফিরে পেয়েছি। পুরো দল হারানো ছন্দে চলে এসেছে। এখন আমি দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। আগামীকালের অঘোষিত সেমিফাইনাল ম্যাচটিতে আমরা ভালো করার আশা করছি।’
পুরো আসরে নিজ দলের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঢাকা কোচ বলেন, ‘শুরুর কয়েকটা ম্যাচে আমাদের ওপেনিং ভালো হয়েছে এবং পার্টনারশিপও ভালো হয়েছে। যে কারণে টুর্নামেন্টের শুরুতে টিম পারফরম্যান্সও ছিল ভালো। কিন্তু মাঝপথে সেই পার্টনারশিপগুলো হচ্ছিল না। আর তাতেই ছন্দপতন।’
অভিজ্ঞ সুজন মনে করেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পার্টনারশিপ খুব গুরুত্বপূর্ণ। জুটি অবিচ্ছিন্ন থাকলে রানের চাকা সচল থাকে, স্কোরবোর্ডটাও হয় মোটাতাজা। তাই মুখে এমন কথা তার, ‘আমি সবসময় চাই আগে বা পরে যখনই ব্যাটিং করি না কেন, বড় পার্টনারশিপ হোক। পার্টনারশিপ সচল থাকলে প্রতিপক্ষ বোলাররা চেপে বসার সুযোগ কম পায়। উপুল থারাঙ্গা আসায় আমরা শুরুতে এখন পার্টনারশিপ পাচ্ছি। সুনিল নারিনও এখন মানিয়ে নিয়েছে।’
আসল জায়গায় অধিনয়ক সাকিবের ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ঢাকা কোচ। তিনি বলেন, ‘সাকিব শুরুর কয়েকটা ম্যাচ খুব ছন্দে ছিলো। যতক্ষণ উইকেটে ছিল হাত খুলে খেলেছে, সাবলীল ব্যাটিং করেছে। তাতে স্কোর বোর্ড সচল থেকেছে। দলও হয়েছে উপকৃত। কিন্তু হঠাৎ একটু ছন্দপতন হয়েছে। এটা একজন ক্রিকেটারের আসতেই পারে। তবে আমি জানি তার আত্মনিবেদনে কোনো ঘাটতি নেই। সে শতভাগ সিরিয়াস। আমি আশা করবো আগামীকাল সাকিব জ্বলে উঠবে। এতে আমার দলের জন্যও ভালো হবে।’
পরিসংখ্যানও তাই জানাচ্ছে। শুরুতে দারুণ ফর্মে থাকা সাকিব ৩০ জুন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্বাগতিক চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৪২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলার পর শেষ তিন ম্যাচে কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন। শেষ তিন ম্যাচে তার রান ( ৭+১+০) মাত্র ৮। অথচ সেই সাকিব শুরুর সাত (২৩+১৩+৬১+৩৪+২০+২৫+৫৩ = ২২৯) ম্যাচে নিয়মিত রান করেছেন।
কাল কোয়ালিফায়ার-২’এ তাই সাকিবের ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার ওপর ঢাকার ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে। ওদিকে আন্দ্রে রাসেল (৫+১১+৪০+১+৪৬+১৪+৩৯+৩০) আর কাইরন পোলার্ডের কেউ (৩+২৭+৬২+৩+১৩+৩৭+০+৩৪+৯+৭) লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। জায়গামত তাদের দিকেও তাকিয়ে ঢাকা।
এআরবি/এসএএস/এমএস