বিশেষ প্রতিবেদন

যক্ষ্মার সঙ্গে লড়াই করছে অবুঝ শিশু নির্জনা

ছোট্ট শিশু নির্জনা। বয়স ছয়মাস। ওজন চার কেজি। জীর্ণশীর্ণ কঙ্কালসার দেহের নির্জনা সারাক্ষণই কাঁদে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের এক নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন নির্জনা টিউবারকুলার (যক্ষ্মাবাহী) ম্যানেনজাইটিস নামক রোগে আক্রান্ত। স্বল্প ওজনের এ শিশুটি মুখের সাহায্যে মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না। নলের সাহায্যে তাকে মায়ের বুকের  দুধের পাশাপাশি ম্যানেনজাইটিস রোগের উচ্চমাত্রার ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরার কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শিশুটির দাদা একজন যক্ষ্মা রোগী। তার মাধ্যমে যক্ষ্মাবাহী জীবাণু সংক্রমণের ফলে তার ম্যানেনজাইটিস (মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত রোগ) হয়েছে। যক্ষ্মার জীবাণু তার মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছে। গত দেড় মাস যাবত হাসপাতালে রেখেই তার চিকিৎসা চলছে।তিনি বলেন, শিশুটিকে আগামী এক বছর যক্ষ্মার ওষুধ খেতে হবে। কোনো পরিবারে যক্ষ্মা রোগী থাকলেও সে পরিবারের শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে এবং কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।ব্রাক্ষণাবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার রূপসদী গ্রামের ইমরান হোসেনের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে নির্জনা সবার ছোট। তার ছয় বছর ও দুই বছর বয়সী দুই ভাইবোন রয়েছে।নির্জনার মা আঁখি বেগম মঙ্গলবার জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতালে আসার আগে একমাস যাবত নির্জনা জ্বরে ভুগছিল। হঠাৎ হঠাৎ তার খিঁচুনি হতো। একবার খিঁচুনির পর ১৮দিন সে অজ্ঞান ছিল। এরপরই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। মস্তিষ্কের চারপাশ থেকে নির্গত এক প্রকার  রস (সেলিব্রো স্পাইনাল ফ্লুয়িড) পরীক্ষার মাধ্যমে টিউবারকুলার ম্যানেনজাইটিস রোগটি ধরা পড়ে।এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আঁখি বেগম জানান, কয়েকমাস আগে তার শ্বশুর চান মিয়ার যক্ষ্মা ধরা পড়ে। তিনি যক্ষ্মার ওষুধও সেবন করছেন। গত মাস দুয়েক আগে থেকে নির্জনা জ্বরে আক্রান্ত হয়। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে টানা মাসখানেক জ্বরের ওষুধ খাইয়েছিলেন। হঠাৎ হঠাৎ খিঁচুনি হতো। একদিন খিঁচুনির পর নির্জনা অজ্ঞান হয়ে যায়। তারা ভাবতে পারেননি তার শিশুর যক্ষ্মাবাহী জীবাণু সংক্রমণে ম্যানেনজাইটিস হতে পারে।মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন অনুসন্ধানরে সময় দেখা যায়, শিশুটিকে নলের সাহায্যে নাক দিয়ে দুধ ও যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে একটি ছয়মাস বয়সী মেয়ে শিশুর ওজন ১৪.৮ থেকে ১৭.৫ পাউন্ড। কিন্ত সে তুলনায় নির্জনার ওজন খুবই কম। তাই সে বার বার কেঁদে উঠছিল। মেয়ের কান্না দেখে মা আঁখি বেগমেরও চোখ ছলছল। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, জানি না আগামী এক বছর যক্ষ্মার সঙ্গে লড়াই করে আমার মেয়েটা বেঁচে থাকবে কি-না?ডা. ইফফাত আরা এ সময় জুনিয়রদের নিয়ে ওয়ার্ডে রাউন্ড দিচ্ছিলেন। তিনি আখির কাছে তার ছোট সন্তান রয়েছে কি-না জানতে চান। তিনি দুই বছরের কোলের শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সেই শিশুটিও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই তাকে পরীক্ষানিরীক্ষা করা প্রয়োজন।এমইউ/বিএ

Advertisement